‘অর্থমন্ত্রী ঋণলেখাপি, শেয়ারবাজার লুটেরাদের রক্ষা করছেন’
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এক হাত নিলেন সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। বিশেষ করে ব্যাংকের মূলধন যোগাতে দুই হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা, ঋণখেলাপী ও শেয়ারবাজার ধসের ঘটনা তদন্তে নাম আসাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা না রাখা, এক লাখ টাকার ওপরে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এই সংসদ সদস্য।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরেন বিরোধী দলের এই সংসদ সদস্য। বাজেট পাসের আগেই আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘সরকারি চারটি ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ ২৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের ঋণ খেলাপি আরেক ব্যাংকের ঋণ নিয়ে নেয়। এর কোনো বিচার হয় না, টাকা পাচার হয়ে যায়। এক বছরে দেশ থেকে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। আর অর্থমন্ত্রী এই খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিচারের আওতায় না নিয়ে এসে তিনি উৎসাহিত করেন। যার জন্য এই বছরের বাজেটেও তিনি দুই হাজার কোটি টাকা রেখেছেন ব্যাংকগুলোর জন্য। এই ব্যাংকগুলোকে কেন মূলধন সরবরাহ করতে হবে প্রতি বছর?’।
এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকা কিছু লুটেরা ও অসৎ কর্মকর্তা মিলে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুটপাট করে নিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। বিদেশে তারা সেকেন্ড হোম করেন। কানাডার একটি এলাকার নাম হয়ে গেছে বেগমগঞ্জ। কারণ, বেগম সাহেবরা সেখানে টাকা পাঠান। অর্থমন্ত্রী যেখানে ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিচার করবেন, সেটা না করে তিনি মূলধন সরবরাহ করে যাচ্ছেন। আর ব্যাংকগুলো মূলধনের নামে জনগণের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘তিনি (অর্থমন্ত্রী) এই সংসদে বলেছিলেন রিজার্ভ চুরি নিয়ে বিবৃতি দেবেন, কিন্তু তিনি কথা রাখেননি।’
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের ঘটনায় নাম আসা ব্যক্তিদের বিচার না করায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার অর্থনৈতিক সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থমন্ত্রী সেটাকে বলেন ফটকাবাজার। অথচ দেখা যায় এই শেয়ারবাজার থেকে ৩০ লক্ষ বিনিয়োগকারীর কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেই ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টেও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সাথে কারা জড়িত, কারা লুটপাট করেছে, সেটি তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, কিন্তু সেই রিপোর্ট বাংলাদেশের জনগণ আজ পর্যন্ত দেখতে পারেনি।… যারা লুটপাট করেছে অর্থমন্ত্রী যেন তাদের মানসম্মান রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদেরকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন।’
ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, সাইফুর রহমান ব্যাংক হিসাবে ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক রেখেছিলেন। এরপর ছয়বার তা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু জানানো হয়নি। এবার অর্থমন্ত্রী তা আটশ টাকা করেছেন। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
বাজেটের পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক লক্ষ টাকার মালিকদেরকে সম্পদশালী বলায় অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমরা মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতি মাসের এক তারিখে এক লক্ষ টাকা তার হাতে তুলে দেব, ব্যাংকে টাকা রাখবো না, কিন্তু আমাদের পরিবারের সব দায়-দায়িত্ব, অর্থনৈতিক ব্যয় নির্বাহ মাননীয় অর্থমন্ত্রী সারা মাসে করে দেবে।’
‘এক লক্ষ টাকার মালিক সম্পদশালী, সেটি তিনি কোন যু্ক্তিতে বলেন? কেন এই আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে না?’-এমন কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের কথা বোঝেন। তার কাছে দাবি জানাই, এই আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করা হোক।’
সব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেন ফজলুর রহমান। বলেন, ভ্যাটের এই একক হারের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃ্দ্ধি হবে।
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি দূর করতে উদ্যোগ নেয়ার তাগাদা দেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘সেটা না করলে এই বিশাল বাজেট তিনি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন