কুবির উপাচার্যের চেয়ারে ছাত্রলীগ সভাপতি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ! আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে সাইফুর রহমান সোহাগ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ওই চেয়ারে বসেননি। তাকে ওই চেয়ারে অত্যন্ত সম্মানের সাথে আদরযতœ করে বসিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আলী আশরাফ নিজে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানা ধরনের কথা চলতে থাকে। ঘটনাটি গত ১৩ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে। এ ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠেছে।
কনফারেন্স রুমে উপাচার্যের চেয়ারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে বসিয়ে তার পাশে অপর একটি চেয়ারে বসেছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আলী আশরাফ নিজেই। আর সে সময় ছাত্রলীগের আরো কয়েকজন কর্মীকে ওই কনফারেন্স রুমে ঢুকে ছাত্রলীগ সভাপতির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে।
উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান সোহাগ যে চেয়ারটিতে বসেছিলেন সেটিতে একটি তোয়ালে দেয়া ছিল এবং তার পেছনেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও শোভা পাচ্ছে। উপাচার্যের চেয়ারে বসে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলছেন, আর উপাচার্য সোহাগের পাশে অন্য আর একটি চেয়ারে বসে আছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা-ছাত্র এবং সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ড. আলী আশরাফ যে কাজটি করেছেন সেদিন তা অত্যন্ত লজ্জাস্কর ও শিক্ষকদের মান-মর্যাদাকে খাটো করেছেন। তবে গতকাল বিকেলে উপাচার্য প্রফেসর ড. আলী আশরাফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে তার চেয়ারে ছাত্রলীগের সভাপতি বা অন্য কাউকে বসতে দেয়ার কথাটি সরাসরি অস্বীকার করেন। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এ সংক্রান্ত ছবি এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে এবং কনফারেন্স রুমের ওই চেয়ারটিতো উপাচার্যের জন্য সংরক্ষিত এবং উপাচার্যের পদটি অত্যন্ত সম্মানজনক পদ তাহলে সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে কেন বসানো হলো? তিনি এর উত্তরে শুধু বলতে থাকেন- ‘না না না আমার চেয়ারে অন্য কেউ বসেনি, সেটিতো উপাচার্যের চেয়ার। ছাত্রলীগের ছেলেরা অন্য কোন শিক্ষকের চেয়ারেওতো বসে না। এখন আপনি যদি বলেন যে সেটি উপাচার্যের চেয়ার তাহলে আমার কিছু বলার নেই।’ ছবির কথা বলাতে উপাচার্য নিজেই বললেন, ‘যদি আমার সামনাসামনি বসে থাকে তাহলে সেটি আমার অফিস কক্ষের , আর যদি পাশাপাশি বসে থাকা ছবি হয়- তাহলে সেটি আমার কনফারেন্স রুমের ছবি।
সেদিন সম্মানিত অতিথিদের জন্য কনফারেন্স রুমে দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল, তবে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কনফারেন্স রুমে আসেননি।’ উপাচার্য নিজেই কিন্তু তার কথার মধ্যে বুঝিয়ে দিলেন ছবিটি কোন রুমের, শুধু অস্বীকার করলেন উপাচার্যের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান সোহাগ বসেননি।
তবে বিশ্ব^বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক গতকাল এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, যদি কখনো কনফারেন্স রুমে মিটিং হয় এবং উপাচার্য মহোদয় না থাকেন তারপরওতো ওই চেয়ারে কেউ বসেন না। চেয়ারটিকে পাশে রেখেই আমরা আমাদের মিটিং শেষ করি, কারণ চেয়ারটি একটি মর্যাদাপূর্ণ সম্মানিত ব্যাক্তির জন্য নির্ধারিত। সেখানে অন্য কেউতো বসতে পারেন না বা বসানো উচিত নয়। এটি শুধু উপাচার্য নয় শিক্ষকদেরও মান মর্যাদা জড়িত। শিক্ষার্থী বা তাদের নেতারা যেটুকু আদর-সম্মান পাওয়ার কথা তাতো পাচ্ছেনই, কিন্তু তাই বলে উপাচার্য মহোদয় তার চেয়ারে অন্য কাউকে বসাতে পারেন না, এটি সত্যিই শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাস্করও ও অসম্মানের বিষয়।
প্রসঙ্গত ২০০৬ সালে কুৃমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৩ মে। আর ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রফেসর ড. আলী আশরাফ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার সময়ে তিনি বিএনপি-জামাত রাজনৈতিক লবিতে ছিলেন। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্য তিনি হঠাৎ তার সেই লবি পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের লবিতে চলে যান এবং তাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য একজন মন্ত্রীর সুপারিশও ছিল বলে জানা গেছে।
এ ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন মন্তব্য করেছেন, ‘কোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি মহোদয় তার অফিস কক্ষে নিজ চেয়ারে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সভাপতিকে বসিয়ে পাশে নিজে অন্য চেয়ারে বসে মিটিং করেছেন। কারণ সরকার যেন আগামী টার্ম তাকে নিযুক্তি দেয়।’ পাশাপাশি তিনি এ-ও লিখেছেন, ‘ঘটনাটি সত্য কিনা জানি না, যদি সত্য হয় শিক্ষামন্ত্রীর দায়দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। আমি মাননীয় মন্ত্রীকে দায়ী করছি না, করুণা করছি। কারণ, ভিসি নিয়োগে সকল প্রক্রিয়া করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে, তাই ভালো নিয়োগ খারাপ নিয়োগ তার ওপরই বর্তাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে বিষয়ে দেখবেন- যিনি ভিসি হবেন তার প্রশাসক হওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা, তিনি ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন কিনা,রাজনৈতিক ভাবনা কি, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্টীয় প্রশাসন একই কাঠামো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন