বৃদ্ধাশ্রমে অন্যরকম ইফতার অসহায় বাবা-মাদের
ষাটোর্ধ্ব বয়সের অসহায় বাবা-মাদের শেষ আশ্রয়স্থল বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র। আর বর্ষার এই বৃষ্টির মতো এসব অসহায়ের মনে দুঃখের কান্না ঝরলেও হয় না তা স্থায়ী বৃদ্ধাশ্রমে দায়িত্বরতদের সেবায়। এখানে আনন্দেই কাটে এসব বয়স্কদের।
বিশেষ করে এই রমজানেও তাদের আনন্দের কোনো কমতি নেই। একে অপরের সঙ্গে যেন সৌহার্দ ভাগাভাগি করে সময় কাটান। মনেই করতে চান না সেই আদরের সন্তানদের। আর এই পবিত্র রমজান মাসে সারা দিন রোজা রেখে এক ভিন্ন রকম ইফতারিতে মেতে ওঠেন বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের আশ্রিতরা।
বিকাল গড়িয়ে ইফতারের কাছাকাছি ঠিক এমন সময় আশ্রিতরা ব্যস্ত ইফতারের আয়োজন নিয়ে। ভিতরের মসজিদ ও ক্যান্টিনে অনেকে গোল হয়ে বসেছেন ইফতারি নিয়ে। কেউ পানি এগিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ বুট-মুড়ি এগিয়ে দিচ্ছেন।
এ এক অন্যরকম আনন্দের মুহৃর্ত। একে অপরের সঙ্গে ইফতারের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে কোনো প্রকার কার্পণ্য করেন না। ঠিক এমনই চিত্র গাজীপুরের মির্জাপুরের বিশিয়া কুড়িবাড়ি এলাকার একটি বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমের। জীবনের শেষ সময়ে এসে পারিবারিক বা নিজস্ব কারণে আশ্রয় নেওয়া এসব বৃদ্ধ বাবা-মা সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় একত্রে বসে পড়েন ইফতারি খেতে।
বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের তৈরি ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, আলুর চাপ, বেগুনি, খেজুর, আম, কাঁঠাল, আনারস, জিলাপিসহ বিভিন্ন ধরনের ইফতারির আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি রাখা হয় বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রস। আর ফলও আছে হরেক রকম। আম, কাঁঠাল, লিচু ইফতারির স্বাদে আনে আরও ভিন্নতা।
এ ছাড়া অনেকের বাড়ি থেকে পাঠানো হয় নানা প্রকার ইফতারির আইটেম। দুপুরের পর সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়তেই বদলে যায় এখানকার দৃশ্য। জমে ওঠে ইফতারি। বয়োবৃদ্ধ কাজল আহমেদ অনেকটা হতাশার সুরে বলেন, ছেলেমেয়ে থেকেও এখন নেই। ওদের কথা একটিবারও মনে করতে চাই না। কারণ এই রমজানেও ওরা একবার দেখতে আসে না। তবে এখানে এসে বৃদ্ধাশ্রমের মানুষদের সেবা-যত্নে সব ভুলে গেছি।
সিলেটের বৃদ্ধা জরিনা বেগম জানান, কী বলব। এখানকার মানুষ খুবই ভালো ও সহানুভূতিশীল। এরা কখনো বুঝতেই দেয় না আমরা অসহায়। আনন্দের সঙ্গে আমরা ইফতারি করি।
নরসিংদীর বৃদ্ধ ফিরোজ মিয়া বলেন, এখানকার ইনচার্জ, সিকিউরিটি গার্ড, মালি, লেবার একসঙ্গেই ইফতার করি। ইফতারের ২০ মিনিট আগ থেকেই সবাই একত্রে বসে পড়ি। ইফতার শেষে সবার জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে শুধু ইফতারিই নয়, আনন্দের সঙ্গে সবাই মিলে ক্যান্টিনে এসে সাহরিও খান। এ যেন নতুন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। বৃদ্ধাশ্রমে একটি মসজিদ আছে। মসজিদের ভিতরে এবং বাইরে বেষ্টনী দিয়ে ইফতারির আয়োজন করা হয়।
বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবু শরীফ বলেন, এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে সময় কাটাই। কেউ বুঝতেই পারেন না যে তারা অসহায়। অসহায়ের কোনো চিহ্ন নেই আশ্রমে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি যেন এসব বয়োবৃদ্ধ সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকেন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ আমাদের খরচে বয়োবৃদ্ধদের সব ব্যয় বহন করা হয়। রমজান মাসেও স্পেশাল ইফতারি আমাদের সৌজন্যেই হয়ে থাকে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন