এবার অর্থমন্ত্রীর পাশে প্রবীণ নেতারা
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের পর এবার অর্থমন্ত্রীকে সমর্থন করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন দলের কয়েকজন প্রবীণ নেতা। প্রস্তাবিত বাজেটের আলোচনায় এতদিন সরকারি ও বিরোধী দলের বেশির ভাগ সদস্য অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন। এমনকি তার পদত্যাগের দাবিও ওঠে।
গত ১ জুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মহিত। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ বেশির ভাগ সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেন। আর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা তার পদত্যাগও দাবি করেন।
তবে পরিস্থিতি পাল্টে যায় গতকাল বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পর। তিনি অর্থমন্ত্রীর পক্ষে অবস্থান নেন। জানান, এই বাজেট অর্থমন্ত্রী একা দেননি, এটা আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দিয়েছেন। এর জন্য বর্ষিয়ান প্রাজ্ঞ একজন অর্থমন্ত্রীকে সমালোচনার মুখে ফেলা উচিত নয় বলেও জানান তিনি।
তোফায়েলের সুরে আজ সংসদে কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আব্দুল মতিন খসরু। এতে তোপের মুখে থাকা অর্থমন্ত্রী আজকের অধিবেশনে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিলেন।
ঈদের আগে সংসদের শেষ দিনের অধিবেশনে বৃহস্পতিবার আমির হোসেন আমু অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের সমালোচনা করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে মন্ত্রিসভায় পাস হয়। তখন কেউ কোনো আপত্তি করেননি। ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর প্রতি এখানে কটাক্ষ করে অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন। এটা অনভিপ্রেত।’
আমু বলেন, ‘একটা বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাজেটের ভেতর ভালো-খারাপ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। সেই আলোচনা আমরা করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৩০ তারিখে একটা সিদ্ধন্ত আসবে। কিন্তু এজন্য অপেক্ষা না করে যারা সমালোচনার নামে কটাক্ষ-কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করছেন এটা ঠিক নয়, দুঃখজনক।’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাজেট নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। সংসদ সদস্য হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে একজন নাগরিক হিসেবে এগুলো পড়ছি ও শুনছি। ১৫ শতাংশ ভ্যাট, আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রে সুদ হার নিয়ে সব কথা হচ্ছে। সবাই অর্থমন্ত্রীর দিকে তীর ছুঁড়ছেন, তাকে দোষারোপ করছেন। মনে রাখতে হবে, অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশাল বাজেট উপস্থাপন করেছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাট আইন, আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এই তিনটি বিষয় নিয়েই বাজেট নয়। আরও বিষয় আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি না। ভ্যাট, সুদ হার ও আবগারি- এই তিন বিষয়ের এদিক ওদিকে হিসাব করে বাজেট মাপবেন না। এক মুখে অর্থনীতির প্রশংসা আর একদিকে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী বলবেন- এটা কিন্তু হয় না।’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর মতো একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা গৌরব বোধ করি। তাকে নিয়ে যেভাবে কথা বলা হয়েছে তাতে জাতি বিব্রত হয়েছে। আমিও বিব্রত হয়েছি। তিনি সিনিয়র ম্যান। সংসদে এভাবে কথা বলা উচিত নয়। তাহলে জাতি আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে।’
গতকাল বুধবার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘একজন সম্মানিত মানুষকে সম্মান দিতে হয়। বাবলু বলেছেন- এখন বিদায় হন। উনি আপনাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। উনি ১২টা বাজেট দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আরও দেবেন। উনার ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আছে।’
জাতীয় পার্টির নেতা বাবলু ও ফিরোজের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বয়স নিয়ে কথা বলেন, আপনার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বয়সের কথা বিবেচনা করেন না। যিনি আপনাকে মহাসচিব বানান, তারপর আবার রুহুল আমিন হাওলাদারকে বানান, যার বয়স অর্থমন্ত্রীর চেয়েও পাঁচ বছর বেশি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন