অবশেষে আবগারি শুল্ক কমছে, থাকছে না ১৫ শতাংশ ভ্যাট
ব্যাংক হিসাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন, তা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হার কমানোর অনুরোধ করেছেন। সেই সঙ্গে সব পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দুই বছর পিছিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ রাখার কথা বলেছেন তিনি।
বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখার সময় শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব করেন।
গত ১ জুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব বিষয় অর্থমন্ত্রী তুলে ধরেছেন তার মধ্যে লাখ টাকার ওপরে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্য ছাড়া সব সেবা ও পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। সংসদের বাইরে বিএনপি এবং সংসদের ভেতরে জাতীয় পার্টি তো বটেই, খোদ সরকারি দলের বেশ কয়েকজন সদস্যও এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার কথা।
বরাবর বাজেট আলোচনার শেষভাবে প্রধানমন্ত্রী কিছু সুপারিশ করেন এবং এরপর অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনেন। আর অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের দিন এই বাজেট পাস হয় সংসদে।
বাজেট পাসের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘ বক্তব্য শেষে অর্থমন্ত্রীকে মোট তিনটি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীতে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর কথা বলেন। হাওরে ফসলহানির প্রেক্ষিতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সরকার চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ কর এবং তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে কমিয়ে ১০ শতাঙশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের বাকি সময়ে এই হার বজায় থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। নানা ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সেখানে বন্যার কারণে চালের ক্ষতি হয়েছে, নইলে আমদানি করতে হতো না। যদি আগামীতেও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়, তাহলে আগাম ব্যবস্থা করে যাবো।’
এরপর ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি ২০ হাজার টাকার বেশি রাখেন, তাকে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হতো। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কথা মানুষ উল্টো বুঝেছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই ২০ হাজার টাকাকে এক লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই বুঝেছে উল্টো। আসলে তিনি এক লাখ টাকা পর্যন্ত তিনি শুল্ক মুক্ত করে দিয়েছিলেন।অর্থমন্ত্রী এক লাখ টাকার বেশি থেকে শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
অর্থমন্ত্রী এক লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এটাকে সংশোধন করে দুটি স্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব আবগারি শুল্কমুক্ত রাখা এবং এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং পাঁচ লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্ব ব্যাংক হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শুল্ক বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করেছিলেন বাজেটে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রস্তাব করেননি।
২০১২ সালে পাস হওয়া ভ্যাট আইন অনুযায়ী এবারের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী নিত্যপণ্য ও চিকিৎসা ছাড়া বাকি পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি দুই বছর পিছিয়ে গিয়ে আগের হারেই ভ্যাট আদায়ের কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন আইনটা খুব ভাল। কিন্তু এটা নিয়ে যেহেতু নানা কথা হয়েছে, আমি মনে করি, মূল্য সংযোজন কর নিয়ে যেহেতু নানা ধরনের কথা হচ্ছে, সে জন্য আগের পর্যায়ে যে রকম ছিল, সেভাবেই থাকবে দুই বছরের জন্য।’
জনগণকে কর ফাঁকির প্রবণতা থেকেও বের হয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কর ফাঁকি দিতে গেলে নিজেরাই ফাঁকিতে পড়বেন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন