অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
ময়মনসিংহ: কল্পনা আক্তার নামে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ নির্যাতিতা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করে। ঈদের পরদিন মঙ্গলবার (২৭ জুন) ভোরে নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়রাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সাথে জড়িত আবুল কাশেম ও রবিউলকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন কল্পানার স্বামী মো. সিরাজুল ইসলাম (৩৫)।
মামলার আসামিরা হলেন- ঝরনা আক্তার (৩৮), পারুল আক্তার (২৫), আইরিন আক্তার (২৪), আবুল কাশেম (২৮), দ্বীন ইসলাম (২৬), সাইফুল ইসলাম (৪০), রবিউল (৩০) ও বিল্লাল হোসেন (১৯)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ কয়রাটি গ্রামের ইজিবাইক চালক সিরাজুল ইসলাম আড়াই বছর আগে পাঁচ শতক জমি বিক্রি করেন। প্রতিবেশি আবু বক্করের তিন ছেলে রবিউল আওয়াল, সাইফুল ইসলাম ও দ্বীন ইসলামের কাছ থেকে ওই জমি বিক্রি বাবদ একলাখ বিশ হাজার টাকা নেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও জমির দলিল দেয়নি।
ওই জমির দখল চাওয়া হলেই সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী কল্পনা ভয়ভীতি দেখাতেন। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিস বৈঠক হলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। গত মঙ্গলবার জমি দখল করতে গেলে কল্পনা আবারও দা নিয়ে ভয় দেখান। পরে তাকে (কল্পনা) ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়।
গোপনে এক যুবক কল্পনাকে নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, গৃহবধূ কল্পনার কোমড় দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা। তার ওপর নির্যাতন চালালে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছেন। এ সময় কেউ এগিয়ে আসলে তাঁদের দা দেখিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নির্যাতনের শিকার কল্পনা আক্তার জানান, তিনি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ও তিন মাসের অন্তঃসত্বা, এ কথা বলেও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি।
কল্পনা আক্তারের শিশু কন্যা সানজিদা আক্তার (৭) বলে, ‘আম্মারে হেরা টাইন্যা-হেচরাইয়্যা (টেনে-হিচরে) তারার বাড়ির সামনে কাডল গাছো (কাঁঠাল গাছ) পিছে দুই হাত নিয়া দড়ি দিয়া বাইন্ধা রাহে। আমি তাঁরার পাও ধরলেও লাথ্থি দিয়া পালাইয়া দেয়, দাও দিয়া ডর দেহায়। এরপর আম্মার চুলের মুডি ধইর্যা পেডো ও বুহে কিল-ঘুষি দেয়।’
প্রতিবেশি নাসির উদ্দিন খান রানা বলেন, একজন নারীকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হতে দেখে তিনি এগিয়ে যান। কিন্তু ওদের হাতে দা-বটি থাকায় কেউ কাছে যেতে সাহস পাননি।
আসামি রবিউল আওয়ালের মা আমিনা খাতুন জানান, জমির দখল চাইতে গেলেই কল্পনা ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। মঙ্গলবার কল্পনা আবারও দা নিয়ে ভয় দেখালে আমরা তাঁকে (কল্পনা) ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখি। তবে কল্পনার ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
নান্দাইল মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুজ্জমান বলেন, গ্রামের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে নির্যাতন চালানোর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে রবিউল আওয়াল ও আবুল কাশেমকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। গৃহবধূকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা দাবি করায়, পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন