চালের দাম কমার লক্ষণ নেই
চার লাখ টন চাল আমদানির ঘোষণা, আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়া- কোনো কৌশলেই কাজ হচ্ছে না। বোরো ধান উঠার আগে আগে বেড়ে যাওয়া চালের বাজার কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। কেজিপ্রতি দাম অন্তত ছয় টাকা কমার ঘোষণা আশ্বাস হয়েই রইল।
হাওরে বন্যায়ে ফসল হানি, অতিবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং ব্লাস্ট রোগে ধানের ফলন কম হওয়ার পর চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যায় গত এপ্রিলে। চিকন চালের দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় গরিব মানুষের মোটা চালের দাম ৫০ টাকার আশেপাশে পৌঁছে যাওয়া। আর এই অবস্থায় চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। পাশাপাশি ভিয়েতনাম থেকে চার লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম চালান সহসা চট্টগ্রাম বন্দরে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
ঈদের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে বলেন, আমদানির কারণে সরবরাহ বাড়ায় চালের দাম দ্রুত কমে আসবে। কেজিপ্রতি ছয় টাকার মতো কমবে-এমন আশার কথাও বলেন তিনি।
তবে ঈদের ছুটি শেষে দুটি কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও চালের বেড়ে যাওয়া দাম এখনও সেভাবে কমেনি। সহসা দাম কমবে, এমন সম্ভাবনার কথাও বলছেন না ব্যবসায়ীরা।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির দৈনির বাজারদরের তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের মতো।
আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৬ থেকে ২০ শতাংশ। আর মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা শাহজাহান তালুকদার মিনিকেট চাল ৫৪ টাকা, বিআর ২৮ চাল ৫১ থেকে ৫২ টাকা, পাইজম ৫০ টাকা এবং মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা করে বিক্রি করেন।
আমদানি বাড়ার পরও চালের দাম কেন কমেনি-জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, ‘বাজারে নতুন চাইল আসছে। তারপরো মিল মালিকরা দাম না কমাইলে আমরা কেমনে কমে বিক্রি করমু। এখন যে অবস্থা চলতাসে সামনে দাম কমরা আর কোন লক্ষণ নাই। যদিও কমে তাইকে কেজিতে এক টাকা বা পঞ্চাশ পয়সা কমবো। এইডা আর এমন কি কমা। সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া চাইলের বাজার আর ঠিক অইবো বইলা মনে হয় না।’
ঈদের পর রাজধানীর চালের আড়তে এখনও স্বাভাবিক বিক্রি শুরু হয়নি। বিক্রেতাদের ভাষ্য অনেকটা এরকম, রোজার মাসে চালের বিক্রি কমে। হোটেল ব্যবসায়ীরাই এ সময় বেশি চাল কিনে থাকে। সাধারণ মানুষ মাসের বস্তা আগেই কিনে রাখেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কারওয়ানবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তারা তিন থেকে চার বা দশ বস্তা চাল বিক্রি করেছেন। অথচ দিনে অন্তত ৫০ বস্তা চাল বিক্রি হওয়ার কথা। ঈদের আমেজ শেষ হওয়ার পর ব্যবসা পূর্ণদমে ফিরতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
রমজান জুড়ে ও ঈদের পর ক্রেতা না থাকায় বেচাবিক্রি কম এবং একই সাথে মিল মালিকরা দাম না কমানোর কারণে বাড়তি চালের দাম রাখতে হচ্ছে-বলছেন বিক্রেতারা।
সব ধরণের চাল সর্বরাহ করে এমন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স ফারুক অটো রাইস মিলের মালিক ফারুক হোসেন ঢাকা বলেন, ‘আমদেরকে অনেক চড়া মূল্যে ধান ক্রয় করতে হয়। সে জন্য আমরা চাইলেই আমরা কম দামে চাল বিক্রি করতে পারি না। তার উপর বন্যার একটা সমস্যায় ধানের মূল্য আরও বেড়ে গেছে। তবে নতুন ধান উঠছে, আশা করি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা কম দামে চাল সরবরাহ করতে পারবো। আর বাজারেও চালের দাম কমবে।’
ঈদে বেড়ে যাওয়া দামকেই বৈধ করে ফেলেছে মাংস বিক্রেতারা
রমজানে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৪৭৫, মহিষের মাংস ৪৪০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭২৫ টাকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন। এই দাম ঠিক ছিল ২৭ রমজান পর্যন্ত।
কিন্তু ঈদের আগে আগে গরুর মাংস ৫৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকা উঠে যায়। আর রাজধানীতে জবাই হওয়া বিপুল সংখ্যক মহিষ বাজারে এসে গরু বলে বিক্রি হয় বলে মহিষের মাংস খুঁজে পাওয়াই দায়। এই মাংসও বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
ঈদ চলে গেছে সোমবার। কিন্তু এখনও দাম কমেনি কেন, জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা মজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে কোন কিছুর দাম একবার বাড়লে কি আর কহনো কমতে দেখসেন? রোজায় অনেক ক্ষতি দিসি, এহন দাম কমাইলেই লস অইব। হাটে এমনিতে গরুর দাম বেশি। কমা টাকায় মাংস বিক্রি কইরা লস দিমু নাকি? নিজের সম্পদ বিক্রি কইরা জনগণরে খাওয়ামু নাকি?’
একই বাজারের খাসির মাংস বিক্রেতা রাজু বলেন, ‘৭৫০ টাকার নিচে খাসির মাংস এখন রাখা সম্ভব না। আর এই দাম কমতে কতদিন সময় লাগতে পারে এইডা কইতে পারি না।’
গরুর মাংসের ক্রেতা ইমামুর রহমান বলেন, ‘ঈদ পার হইসে তিনদিন হয়, তারপরও তাদের ঈদ যায় না। ২৬ রোজা পর্যন্ত সরকারি মূল্য মানে নাই। এখন সেই উসিলায় দাম বাড়ানোর প্ল্যান। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে বলে রোজার মাসের ক্ষতি পেসাইতে হইব।’ গরু ও খাসির মাংসের দাম না কমলেও কেজি প্রতি ২০টাকা থেকে ৩০ টাকা করে কমেছে মুরগির দাম। কারওয়ান বাজারের মুগি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর জানান, ব্রয়লার মরগি কেজিপ্রতি ১৫০, পাকিস্তানি মুরগি ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।ঢাকাটাইমসের সৌজন্যে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন