পুলিশের ‘ক্রসফায়ার’ বেড়েছে, কমেছে র‌্যাবের

চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে মৃত্যু বেড়েছে। গত বছরের একই সময় যেখানে ক্রসফায়ারে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নিহত হয়েছে ৬৮ জন। তবে গত বছরের সঙ্গে চলতি বছরের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে মৃত্যু বাড়লেও কমেছে র‌্যাবের ক্রসফায়ার।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের দুই বছরের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা তরে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি বছরই বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি।

আসকের এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ ‍জুন পর্যন্ত ক্রসফায়ারে যে ৬৮ জন নিহত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। তাদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৪৬ জন। এ ছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের ক্রসফায়ারে আট জন, র‌্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে এক জন এবং র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ১৩ জন।

গত বছরও ক্রসফায়ারে মৃত্যুর বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছিল পুলিশের সঙ্গে। তখন যে ৬২ জন নিহত হয়েছিল তাদের মধ্যে ৩৭ জনই মারা যায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। বাকিদের মধ্যে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় ২৪ জন এবং বাকি একজন নিহত হয় বিজিবির ক্রসফায়ারে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ক্রসফায়ারে মৃত্যুর বিজ্ঞপ্তি আসতে শুরু করে গণমাধ্যমে। প্রতিটি বিজ্ঞপ্তির ভাষাই একই রকম। আসামিকে ধরে রাতে অস্ত্র উদ্ধার বা পরিবহনের সময় তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টায় দুই পক্ষে গোলাগুলির মাঝে পড়ে মৃত্যুর দাবি করা হয় এসব বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রথম দিকে এই ক্রসফায়ারের বিজ্ঞপ্তি আসত মূলত র‌্যাবের পক্ষ থেকে। আর একে বিচারবহির্ভুত হত্যা বলে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি কম আসছে। এখন বেশিরভাগ বিজ্ঞপ্তি আসছে পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে প্রথম দিককার মত ক্রসফায়ারের বদলে এখন বন্দুকযুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করা হয়। তবে বাকি কাহিনি প্রধানত একই থাকে।

দেশি এবং বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবর এসব বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারকে বিচারবহির্ভুত হত্যা বলে অভিযোগ করে প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। তারা এসব ঘটনার তদন্ত করার দাবিও করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ বিরল।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ক্রসফায়ার ছাড়াও পুলিশের নির্যাতনে চার জন, পুলিশের গুলিতে ১২ জন, র‌্যাবের গুলিতে এক জন এবং র‌্যাব ও পুলিশের গুলিতে এক জন নিহত হয়েছে। তবে ক্রসফায়ার এবং এই গুলিতে নিহতের মধ্যে পার্থক্য কী, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে বান্দরবানের লামায় সেনাবাহিনীর গুলিতে এক জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে এক জন, পুলিশ হেফাজতে গ্রেপ্তারের পর রহস্যজনকভাবে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় র‌্যাবের হেফাজতে হানিফ মৃধা নামে এক ব্যাক্তি মৃত্যু হয়েছে।

আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে আটক ৪৪

আসক জানিয়েছে, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ অনুযায়ী সাদা পোশাকধারী ব্যক্তির আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৪৪ জনকে আটক করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এর মধ্যে সাত জন ফেরত এসেছেন এবং দুই জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে। আর পরে তিন জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো আটকের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে সাদা পোশাকে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫০ জনকে তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়জনের লাশ পরে পাওয়া যায়, দুজন ফেরত এসেছে, চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাকিদের কোনো খবর মেলেনি।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এই ছয় মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ২৫ জন। এর মধ্যে কয়েদি আট জন, হাজতি ১৭ জন।

রাজনৈতিক সংঘাত

গত ছয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১৮৫টি। এতে নিহত হয়েছেন ৩৭ জন এবং আহত হয়েছেন ২৫৭০ জন।

এ সময় গণপিটুনির ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে বলেও আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়।