‘ওরা আমাকে ৭ বার বিক্রি করেছে’ সেই ভয়ংকর রাতের কাহিনী ফাঁস করলো তরুণী!
সম্প্রতি এক বিকেলে নারীদের কয়েকটি গ্রুপ ইরাকের একটা পবিত্র জলাধার গোসল করে শরীর শুকোচ্ছিলেন। এরা সবাই জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নিযার্তনের থেকে ফিরে এসেছেন। লালিশ গ্রামের ওই গুহার ভেতরে তারা মাথা, মুখ ও শরীর ধুয়ে প্রার্থনা করছিলেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের বাল্যকালে দীক্ষা নেওয়া বিশ্বাসে ফিরে যান।
লালিশের জলাধারে হচ্ছে পবিত্র শ্বেত বসন্ত, যেখানে সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে আসা হয় ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টানদের মতো ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য। লালিশের মাটি মিশ্রিত এই জলাধারের পানি জন্ম, মৃত্যু, বিয়ের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার জন্য ব্যবহার করা হয়।
সেখানেই সদ্য গোসল সেরে ওঠা ২৮ বছর বয়সী তরুণী নুর বলেন, এখানে আমরা মুক্তি পেয়েছি। মুক্তির কথা বললেও গ্লানি আড়াল করতে পারছিলেন না এই তরুণী। প্রকৃত নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানানোয় ছদ্মনাম নুর ব্যবহার করা হয়েছে।
নিজেকে শুদ্ধ করতে পবিত্র ওই জলাধারে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার তিনি এসেছেন। নিজের জীবন পুনর্গঠনে সহায়তা করতে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন প্রায় তিনবার।
অনুষ্ঠানে তাকে দেওয়া সাদা রংয়ের একটি স্কার্ফ দেখিয়ে নুর বলেন, এই সাদা কাপড়গুলো আমাকে আনন্দ দেয়। পবিত্র ওই জলাধারের পানি বাড়িতে নিয়ে যান। ইয়াজিদি ওই তরুণী বলেন, আমি অসংখ্যবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার সন্তানদের জন্য জীবন চালিয়ে যাচ্ছি এখনও।
গোপন বিশ্বাসের কারণে আইএস যোদ্ধারা ‘শয়তানের পূজারী’ মনে করে ইয়াজিদিদের। পুরুষ এবং বয়স্ক নারীদেরকে গণহত্যা করা হয়। তাদের মরদেহ নিক্ষেপ করা হয় গণকবরে; যা পর্বতের ফাঁকা স্থান পূরণ করছে। আইএসের যোদ্ধারা এখনো এসব এলাকার বড় একটি অংশে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।
তরুণীদের জন্য সেখানে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। আইএস যোদ্ধারা সেখানে দাসত্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। আইএসের দাবি, অমুসলিমদেরকে নিযার্তন ইবাদতের একটি অংশ। তারা বেশ কিছু শহরে অসামাজিক কাজের বাজার প্রতিষ্ঠা করেছে; যেখানে তরুণী এমনকি ৯ বছরের শিশুদেরকেও নিলামে তোলা হয় লালনা হিসেবে।
নুর বলেন, ওরা আমাকে সাতবার বিক্রি করেছে। সেখানে আমার চেয়েও ভয়াবহ জীবন যাপন করছেন অসংখ্য নারী। তার তিন ও চার বছর বয়সী দুই মেয়ে রয়েছে। তৃতীয় সন্তান পেটে আসার সময় পুরো পরিবারের সঙ্গে তাকেও তুলে নেওয়া হয়েছিল। দুই দিন পর তার স্বামীকেও নিয়ে যায় আইএস যোদ্ধারা; যিনি এখনো নিখোঁজ আছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নুর তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন একটি বদ্ধ ঘরে। আরো দুই বন্দি নারী ধাত্রী হিসেবে তাকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে পান তিনি।
প্রায়ই তিন সন্তানসহ বাজারে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো। এভাবেই সুন্দরীরা বিক্রি হয়ে যেত বলে নূর জানান।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন