১৮৫ ক্যারেটের হিরা ছিল দাদার পেপারওয়েট‚ নাতির দিন কাটত ভেড়া পালনে!
বিশ্বের সেরা হিরা ছিল তাঁর পেপার ওয়েট। কিন্তু তাঁর বংশধরদের কথা জানলে চোখে পানি আসবে। তাঁদের দারিদ্র্য জানার আগে ফিরে যাই অতীতে। জানি‚ কেমন ছিল পূর্বপুরুষের অগাধ সম্পত্তি। পূর্বপুরুষের নাম মীর ওসমান আলি খান‚ সপ্তম আসফ জাহ। হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম।
স্বাধীনতার আগে ভারতের রাজন্য স্টেটগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় ছিল হায়দ্রাবাদের নিজাম স্টেট। এর অধীনে যে এলাকা ছিল তার আয়তন আজকের ইউনাইটেড কিংডম-এর প্রায় সমান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের অর্থ সাহায্য করায় শাসকদের বেশ নেক নজরে ছিলেন নিজামরা। মিলেছিল উপাধি “His Exalted Highness” এবং “Faithful Ally of the British Crown”|
এহেন নিজাম বংশের সিংহাসনে ১৯১১ সালে অভিষেক হয় মীর ওসমান আলি খানের। তিনি তাঁর রাজত্বের প্রভূত উন্নতি ও কল্যাণসাধন করেছিলেন। এত সম্পত্তি ছিল‚ ১৯৩৭ সালে টাইম পত্রিকা তাঁকে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে। তাঁকে নিয়েই তৈরি হয় পত্রিকার প্রচ্ছদ কাহিনী।
এক নজরে দেখে নিই সেই সম্পত্তি
> ১৮৫ ক্যারেটের হিরে ছিল তাঁর টেবিলের পেপার ওয়েট।
> তাঁর কাছে যা মুক্তো ছিল তা দিয়ে ভরে যেত লন্ডনের পিকাডিলি সার্কাস।
> তাঁর মূল প্রাসাদে কর্মী ছিলেন ৬ হাজার। তার মধ্যে ৩৮ জনের কাজ ছিল শুধু
ঝাড়লন্ঠন মোছা।
> ১৯৪২ সালে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২০০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে সদ্য স্বাধীন ভারতের বার্ষিক রাজস্ব ছিল ১ বিলিয়ন ডলার।
> ১৯৪৭ সালে তিনি উপহার দেন রানি এলিজাবেথের বিয়েতে। হিরের টিয়ারা‚ ব্রোচ ও নেকলেস। তারমধ্যে ব্রোচ ও নেকলেস এখনও মাঝে মাঝেই পরেন রানি। পরিচিত হায়দ্রাবাদের নিজামের নেকলেস বলে।
এবার দেখুন মুদ্রার অন্য পিঠ
> নিজাম মীর ওসমান একই ফেজ টুপি পরেছেন ৩৫ বছর ধরে।
> খেতেন এনামেলের থালায়।
> সুখটান দিতেন আধপোড়া সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশে।
তাই বলে কমতি ছিল না কামবিলাসে
> তাঁর ব্যক্তিগত সুবিশাল পর্নোগ্রাফিক সংগ্রহ বিশ্বে বিরল।
> জেনানা মহলে ছিল গোপন ক্যামেরা।
> বৈধ স্ত্রীরা ছাড়াও হারেমে ছিলেন প্রায় ১৫০০ রমণী।
> মৃত্যুর আগে হারেমের ৮৬ জন রমণীর সন্তানদের তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে তাঁর ঔরসে জন্ম হয়েছে আরও অন্তত ১০০ জনের। তাদের কপালে জোটেনি স্বীকৃতি।
১৭২০ খ্রিস্টাব্দে মুঘলদের বকলমে হায়্দ্রাবাদে নিজাম বংশ স্থাপন করেছিলেন মীর কামারুদ্দিন খান। ২০০ বছর পরে মীর ওসমান আলি খান ছিলেন সপ্তম তথা শেষ নিজাম। ৮০ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রয়াত হন। ১৯৯০ সালে এসে দেখা গেল শেষ নিজামের ৩৪ জন বৈধ সন্তানের ৪০০ জন বংশধরের অস্তিত্ব আছে। তাঁদের মধ্যে ১০৪ জন সরাসরি নিজামের নাতি নাতনি।
তাঁদের মধ্যে করুণতম অবস্থা মুকররম জাহ-এর। অথচ তাঁকেই উত্তরসুরী হিসেবে চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন সপ্তম নিজাম মীর ওসমান। কারণ তিনি মনে করতেন তাঁর ছেলেরা কেউ নিজাম হওয়ার যোগ্য নন।
১৯৮০ সাল অবধি মুকররম ছিলেন ধনীতম ভারতবাসী। কিন্তু তারপরেই শুরু অবক্ষয়। রাজতন্ত্র চলে যাওয়ায় বেশিরভাগ সম্পত্তি সরকার নিয়ে নেয়। বাকিটা চলে যায় শরিকি বিবাদ ও মামলা মোকদ্দমায়।
ঘটনাচক্রে মুকররমের মা ছিলেন তুরস্কের ওটোমান বংশের রাজকন্যা। তিনি নিজেও বিয়ে করেন এক তুর্কী রাজকন্যাকে। কিন্তু যখন হায়্দ্রাবাদ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ভেড়ার খামার খুলে বসলেন মুকররম‚ যেতে রাজি হলেন না স্ত্রী। ভেঙে গেল বিয়ে।
এরপর বিয়ে করলেন ব্রিটিশ এয়ারহোস্টেসকে। দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পরে আরও তিনবার বিয়ে করেছেন। তৃতীয় স্ত্রীও বিয়ে ভেঙে চলে গেছেন। বাকি থাকেন কেবল চতুর্থ ও পঞ্চম স্ত্রী। পূর্বপুরুষদের মতো তিনিও লাগামহীন নারীসঙ্গে অভ্যস্ত ছিলেন কোনও এক সময়ে।
সেই মুকররম জাহ এখন মধুমেহ রোগে ন্যুব্জ। শোনা যায়‚ তুরস্কের এক ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে দিন কাটে অতীতের ধনীতম ভারবাসীর।- ইন্টারনেট
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন