‘ষোড়শ সংশোধনীর শুনানিতে ভুল তথ্য দিয়েছেন অ্যামিকাস কিউরিরা’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিরা ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান সাংসদ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। এসময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে এ সম্বন্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু প্রশ্ন হলো সার্বভৌমত্ব নিয়ে। যারা অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে বক্তব্য রেখেছেন তাদের বক্তব্য আমার কাছে আছে। তারা অসত্য কথা বলেছেন। ভুল তথ্য জাতিকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন ড. কামাল হোসেনকে যখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করে তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমরা ভারতকে অনুসরণ করেছিলাম। এখন ভারতে এটা নেই। তার মতো একজন লোক এ অসত্য বলতে পারেন? ভারতের সংবিধানের ১২৪ তম অনুচ্ছেদে পার্লামেন্ট উভায়েক পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতার সমর্থনে রাষ্ট্রপতি কতৃক সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করার পদ্ধতি বর্নণা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমিরুল ইসলাম বললেন কোথাও নেই। তিনি অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলেছেন। আমার খুব দুঃখ লাগে, এরা সংবিধান নিয়ে কথা বলেন, সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। আজকে আমার বলতে দ্বিধা লাগে, তারা সুবিধাবাদী। ৭২ (১৯৭২) এর সংবিধানে করলেন একরকম আর এখন সেটার উল্টো বলতে গিয়ে নানা কথা বললেন। সেই কথাগুলো আমি উল্লেখ করতে চাই না।’
এসময় অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ান বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা দেয়া আছে বলে তার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘একমাত্র ব্যতিক্রম হলো পাকিস্তান। এটা করেছে আইয়ুব খান। যার বিরুদ্ধে আমরা ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান করে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিলাম। সেই আইয়ুব খানের পদ্ধতি আমাদের দেশের এই অ্যামিকাস কিউরিদের পছন্দ। এটা করতে গিয়ে তারা অসত্য কথা বলেছেন।’
হাইকোর্টের জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের জজদের কখনো অসম্মান করতে চাই না-এমন মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু মন্তব্য? লেখাপড়া জানে না, আরও এমনভাবে কতগুলো শব্দ আমিও সেটি উচ্চারণ করে পিছের দিকে আনতে চাই না। এই সংসদের সদস্য স্পিকার আজকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তিনি সিপিইউ সভাপতি হয়েছেন। এই সংসদের আরেকজন সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী অনেক বড় বড় দেশ তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, অনেক দেশের মনোনীত পার্থীদের হারিয়ে তিনি আইপিইউ’র সভাপতি হয়েছেন। সেই সংসদ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা?’
সংবিধানের আর্টিকেল ৭০ দেখিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও দাবি তোফায়েলের। তিনি বলেন, ‘তারা নিজেদের নামের আগে বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, সংবিধান প্রণেতা বলেন। আর্টিকেল ৭০ নিয়ে কথা বলেছেন। আর্টিকেল ৭০ দেখিয়ে, সমস্থ ভুল তথ্য। আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং ব্যথিত। সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত এই সংসদ। আমাদের ক্যাবিনেট সংসদের কাছে রেস্পন্সিবল।’
তোফায়েল আরও বলেন, ‘যারা অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ওখানে বক্তৃতা করেছেন, আমি বলব সবই অসত্য। সত্যতার লেশমাত্র নেই। ওখানে অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানের বক্তব্য দিয়েছেন তারা। আমি ভাবি এরাতো সামাজিক মানুষ, এরা মুখ দেখাবে কীভাবে। পৃথিবীর সব সভ্য দেশে এখনো পার্লামেন্ট সার্ভভৌ্ম এবং তারাই বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা রাখেন।’
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে সম্প্রতি আপিল বিভাগ রায় দেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ এই রায় দেন। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা হারিয়েছে সংসদ। বর্তমান সরকার ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রতিস্থাপিত করেছিল। ওই সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারত সংসদ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন