সব জেনেই কী ব্যবহার করছেন মেকআপ!
বর্তমানে কম-বেশি সব বয়সের নারী-পুরুষ স্টাইলিশ। এজন্য নিজেকে সাজাতে তারা ব্যবহার করেন নানা রকম প্রসাধনী। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির রমরমায় মেকআপ অ্যান্ড বিউটি এখন শিল্প। কিন্তু অনেকেই জানেন না নিজেকে সাজিয়ে তুলতে যে প্রসাধনী ব্যবহার করছেন তার ক্ষতিকর দিকগুলো। জানলে হয়ত আপনি নিজেই এই প্রসাধনী ব্যবহার এড়িয়ে চলবেন।
ফাউন্ডেশন, সেটিং পাউডারের মতো প্রসাধনীতে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। রাসায়নিক পদার্থ ত্বকের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় যেমন শুষ্ক ভাব, অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, তেমনই কিছু কিছু টক্সিক রাসায়নিক ত্বকের গভীরে গিয়ে রক্তে প্রবেশ করলে তার থেকে হতে পারে ক্যানসার!
সম্প্রতি ব্রেস্ট ক্যানসার ফান্ডের দ্য ক্যাম্পেন ফর সেফ কসমেটিক্স প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করান তাদের ব্যবহার করা পাউডার থেকে সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরাও। সংস্থাটি কসমেটিক্সে থাকা যে রাসায়নিকগুলো সম্পর্কে সাবধান করেছে সেগুলো হলো-
টলুইন: নারী নিজেকে আর্কষণীয় করে তুলতে নখে নানা রংয়ের নেলপলিশ ব্যবহার করে। কিন্তু এই নেলপলিশে যে মারাত্মক ক্ষতি লুকিয়ে আছে তা জানলে অনেকেই এই কৃত্রিম রং ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। কারণ নেলপলিশের পেইন্ট-থিনার হিসেবে ব্যবহৃত টলুইন স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে, শুধু তাই নয় ডিমেনশিয়ার মতো বড় সমস্যা পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। নেইল প্রডাক্টের পাশাপাশি কিছু হেয়ার ডাই-তেও টলুইন থাকে।
বেঞ্জোফেনন: আমরা সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। যেগুলোতে বেঞ্জোফেনন ব্যবহার করা হয়। ডার্মাটাইটিসে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বেঞ্জোফেনন থেকে ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। লিপ বাম, ফাউন্ডেশন, নেল পলিশ, ফ্র্যাগরেন্স, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার স্প্রে, বেবি সানস্ক্রিনে বেঞ্জোফেনন থাকে।
ক্যাডমিয়াম: ক্যাডমিয়াম সম্পর্কে গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট করে দেয়া পরিমাণের অনেক নীচেও ক্যাডমিয়াম শরীরের জন্য টক্সিক হতে পারে। নরম, নীলাভ-সাদা এই ধাতু থেকে কিডনির সমস্যা, হাড়ের অসুখ, এমনকী ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এস্টি লডার, জাফরা কসমেটিক্স, ল’রিয়েল, ইভস রশার, রেভলন, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, মেরি কে ও জেন অ্যান্ড কো-এর মতো বিখ্যাত ব্রান্ডের পাউডার আইশ্যাডো, ক্রিম আইইশ্যাডো, আই প্রাইমার, ফাউন্ডেশনের মতো প্রডাক্টে ক্যাডমিয়ামের মাত্রা চিন্তায় ফেলেছে গবেষকদের।
লেড: প্রচুর মেকআপ প্রডাক্টে এই ভারী ধাতু থাকে। বিশেষ করে যে সব প্রডাক্টে পিগমেন্ট থাকে। যেমন ফাউন্ডেশন, আইশ্যাডো, লিপস্টিক, আইলাইনার। লেড অত্যন্ত টক্সিক। এই লেড যখন রক্তে মেশে তা স্নায়ুর সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব এমনকী ক্যানসারেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে লিপস্টিক, লিপ গ্লস ও লিপ লাইনারে সবচেয়ে বেশি লেড থাকে। এ ছাড়াও হেয়ার ডাই, মাস্কারা, আইশ্যাডো, ব্লাশ, ফাউন্ডেশনেও লেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বেবি পাউডার ও লোশন ছাড়া সব মেকআপ প্রডাক্টেই সামান্য পরিমাণ হলেও লেডের উপস্থিতি থাকে।
প্যারাবেন: কসমেটিক প্রডাক্টে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রুখতে প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই প্যারাবেন এন্ডোক্রিন হরমোনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। পারফিউম ও কোলনে সাধারণত ব্যবহার করা হলেও শাওয়ার জেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও কিছু লোশনেও প্যারাবেন থাকে। এই রাসায়নিক স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
পাউডার মেকআপ, প্রেসড পাউডার ফাউন্ডেশন, ব্লাশ ও লিক্যুইড ফাউন্ডেশনে এই মিনারেল ব্যবহার হয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময়ই এই মিনারেল অ্যাসবেসটসের মতো কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ট্যাল্ক জরায়ুর ক্যানাসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
তাহলে একবার ভাবুন আপনি কি জেনে শুনেই নিজের বিপদ ডেকে আনবেন!
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন