ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন

ক্ষমতাসীন দল অাওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। এক পর্যায়ে সভাস্থলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মহানগর আওয়ামী লীগের হল রুমে সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলে এ সভা।

কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সভায় একে একে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক, উপ সম্পাদক, সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতিবৃন্দ। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সভা।

নতুন কমিটি গঠন, নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, বিবাহিত নেতা, কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সম্পদের রহস্য ছাড়াও সংগঠনের নানা অনিয়মের বিষয় উঠে আসে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে।

একজন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করেন, ‘আগামী ২৬ জুলাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে কি হলো?’

এ প্রশ্নের জবাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে টেনে প্রশ্নটির জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন।

পরে সেই ছাত্রনেতা সম্পূরক প্রশ্নে আবার প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি তবে অনিশ্চিয়তার মধ্যে থাকবো? বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তো একটি গঠনতন্ত্র মেনে চলে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হয়, তবে নেত্রীর নির্দেশে তা সংশোধন করা উচিত।’ কমিটি গঠন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও ওঠে আসে তার বক্তব্যে।

সভায় অংশ নেয়া সংগঠনের একাধিক সহসভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিভাবে বিত্তশালী হয়েছেন সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা কিভাবে এত দামি গাড়িতে চড়েন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবনের কাজের টাকা ভাগাভাগি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ওই নেতা।

এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই কেন্দ্রীয় নেতাকে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন এস এম জাকির হোসেন।

বক্তব্যের শুরুতেই ছাত্রলীগের যেকোনো ইউনিটে পদধারী বিবাহিত নেতাকর্মীদের ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের নির্দেশ দেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়া সংগঠনকে শক্তিশালী, গতিশীল ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সকল জেলায় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের আগামী ১৫ থেকে ২৫ জুলাই স্ব-স্ব ইউনিটে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এসময় তারা বিভিন্ন উপজেলা, কলেজ, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের সঙ্গে কাজ করবেন। পাশাপাশি মাদকাসক্ত নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে ছাত্রলীগকে যথাযথ ভূমিকা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

সমাপনী বক্তব্যে ফেসবুকের রাজনীতি বাদ দিয়ে তৃণমূলে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ও সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেন ছাত্রলীগ সভাপতি।

২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি এবং এস এম জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি। চলতি মাসের ২৬ তারিখে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে।