৩৫ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত

বৈশাখ মাসেই এবার বৃষ্টি ঝরেছে বর্ষার মত। আর বর্ষা আসার পর আকাশ ভেঙে পড়েছে যেন। শুকনো দিন মাঝে দুই এক দিন দেখা গেছে মাত্র। বাকি পুরো মাসই গুড়ি গুড়ি বা ভারী বৃষ্টি হয়েছে দেশ জুড়ে। আর এই বৃষ্টি জনজীবনে নিয়ে এসেছে বিপর্যয়।

বৃষ্টিতে পাহাড় ধস হচ্ছে নিয়মিত। বন্যায় ভাসছে দেশের একটি বড় অংশ। হাওরে ধান নষ্ট হওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা নিয়মিত খবর হয়ে আসছে গণমাধ্যমে। আর সড়কগুলোর একটি বড় অংশে তৈরি হয়েছে খানা খন্দক। এসব কারণে বৃষ্টি মানেই যানজট আর চরম ভোগান্তির হয়ে দাঁড়িয়েছে গত এপ্রিল থেকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব জানিয়েছে, এবার যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে সেটা গত ৩৫ বছরেও দেখা যায়নি। গত এপ্রিলে দেশে যখন ৩৫ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিস্নাত বৈশাখের রেকর্ড হয় তখন দেশে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৫৯ মিলি মিটার।

এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বৃষ্টি ঝরছে বর্ষায়। জুনে বৃষ্টি হয়েছে ৪৫৭ মিলি মিটার। আর জুলাইয়ের ২৫ দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৫৭২ মিলিমিটার।

এর আগে ১৯৮২ সালের জুলেইয়ে গড়ে ৫১১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল চট্টগ্রামে।

এই পরিমাণ বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বৃষ্টি হলে এখন রীতিমত আতঙ্ক নিয়ে থাকে মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘এই রকম অবস্থাগুলি স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় সময় পর পর আসে। তবে এটাকে একেবারে অস্বাভাবিক এটা বলা যাবে না, প্রাকৃতিকভাবেই এটা হয়ে থাকে।’

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এটাকে স্টিম ইভেন্ট বলে, এই ইভেন্টগুলি স্বাভাবিকভাবেই পাঁচ বছর, সাতবছর, আট দশ বছর পরপর আসে, এটা কোন টাইম ফিক্সড করে না। স্বাভাবিকভাবেই আট দশ বছর পর পর এই রকম রিটার্ন প্রিয়ড আসে।’

প্রশান্ত মহাসাগরের বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তন লা লিনারও একটি প্রভাব এবার রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত দুই বছর এ রকম একটি পরিবর্তন এল নিনোর প্রভাবে তীব্র খরা হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। এবার উল্টোপ্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে এসব দেশে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘লা লিনার সাথে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের কিছুটা রিলেশন পাওয়া যায়। তবে সেটা ওইভাবে স্ট্রং রিলেশন না, আমাদের এই রিজনে স্বাভাবিকভাবে মুনসুনের প্রভাবে বেশি বৃষ্টি হয়। আমাদের এই রিজনে মুলত মুনসুনের যে ডিপ্রেশন হয় সেটার প্রভাবে বেশি বৃষ্টি হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে বর্ষাকালে এই ডিপ্রেশন দুই তিন বার হয়, তবে এটা যদি প্রতি মাসে হয় সেটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।’

বজলুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের ঢাকায় যে বৃষ্টিটা হয় তা আহামরি কোন বৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের পুরো সিস্টেমটাই কলাপস হয়ে যাচ্ছে, এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো শহর কলাপস হয়ে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই শহরে রাস্তা ঘাট খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিষয়টি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে, আর আমাদের জন্য অসস্তিকর পরিবেশ হয়ে যাচ্ছে।

এই ধরনের বৃষ্টি মাঝে মাঝে হবে উল্লেখ করে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এই ধরনের বৃষ্টি মাঝেমাঝেই হবে, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের ড্রেনেজ সিস্টেমগুলি করা উচিত। ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি চার, পাঁচ বছর পর পরই হবে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে। এ জন্য এটাকে মাথায় নিয়ে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা উচিত।’

গত কয়দিন ধরে অঝর ধারার বর্ষণ আপাতত থামবে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ।

মঙ্গলবার ৭২ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, উত্তর বঙ্গোবসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।