কলকাতার তিন বড় তারকার বন্ধুত্ব কতটা?
আমিই ইন্ডাস্ট্রি : ‘অটোগ্রাফ’ ছবির এই সংলাপ মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন প্রসেনজিত্। যে কেউ তার কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। বুম্বাদা সকলের জন্য। প্রসেনজিত্ একটা সময় ইন্ডাস্ট্রিকে একা টেনেছিলেন।
জিত্ আসার পর ‘প্রসেনজিতের দিন ফুরিয়ে গিয়েছে’ গোছের লেখালেখি হয়। সেই থেকেই প্রথম ‘খটকা’। সামনাসামনি দু’জনের সম্পর্ক ভালই। জন্মদিনে শুভেচ্ছা বিনিময়, দেখা হলে হাসিমুখে পোজ, ছবি মুক্তির আগে নিয়মমাফিক টুইটবার্তা…চলতে থাকে।
ইন্ডাস্ট্রির একাংশের মতে, জিতের তরফ থেকেই শীতলতা বজায় রাখা হয়েছে। বহু বার প্রসেনজিত্ আর জিৎকে নিয়ে ছবি করার পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। বিরসা দাশগুপ্তের ‘ওয়ান’ ছবির জন্য জিৎকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সে ছবিতে তিনি সহ-প্রযোজক হওয়ার দাবি জানান বলে শোনা যায়। অতএব, সে পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।
প্রসেনজিত্ প্রকাশ্যে জিৎকে নিয়ে কিছু না বললেও, ঘনিষ্ঠমহলে অনেক সময়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশ্বাসী। জিত্ তুলনায় সাবধানী। এ নিয়ে প্রসেনজিত্ মন্তব্যও করেছেন। বরং দেবের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক সহজ। দেব ‘চাঁদের পাহাড’, ‘বুনোহাঁস’ করার সময় প্রসেনজিত্ তার প্রশংসা করেছেন।
দেবের প্রযোজনায় ‘ককপিট’-এ তিনি ক্যামিও করছেন। প্রসেনজিতের মতে, প্রতিযোগিতা সব সময়েই থাকবে। কিন্তু তাতে সম্পর্কের উষ্ণতা নষ্ট হবে কেন? তাপস পালের সঙ্গে তার রেষারেষি বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারেনি। সেই উষ্ণতা তিনি এই প্রজন্মের মধ্যে পান না বলেই মন্তব্য করেছেন।
বস ওয়ান, টু, থ্রি : একজন ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হলে আর একজন ‘বস’। প্রসেনজিতের ‘আমি ইন্ডাস্ট্রি’র ধারণাটাই জিতের না-পছন্দ। সকলে বুম্বাদার কাছে পরামর্শ-প্রার্থী হয়, অথচ সিনিয়র হয়েও জিত্ সেই জায়গাটা ধরতে পারেননি। নিন্দুকদের মতে, জিত্ কারও সঙ্গে খোলাখুলি মেশেন না বলেই সমস্যা। নইলে তার মতো ভদ্র এবং ডিসিপ্লিনড ব্যক্তিত্ব ইন্ডাস্ট্রিতে কমই আছেন।
প্রকাশ্যে প্রসেনজিত্ সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু না বললেও জিত্ তাদের প্রতিযোগিতার আগুনে জল ঢালার চেষ্টা করেননি কখনও। ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের সমস্যা, বাংলাদেশের সঙ্গে ছবির বাজার উন্মুক্ত করা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে জিত্ তিতিবিরক্ত। সকলে একমত হয়ে কিছু করে না বলেও তার অভিযোগ।
এ ক্ষেত্রে ‘সিনিয়র মোস্ট’ হিসেবে প্রকারান্তরে তিনি প্রসেনজিৎকেই দায়ী করেন। জিতের সঙ্গে শহরের একাধিক প্রযোজনা সংস্থারও সমস্যা রয়েছে। জিৎ-প্রসেনজিত্ যদি এক ছবিতে কাজ করেন তা হলে একে অপরের চরিত্রের দৈর্ঘ্য মাপামাপিতেই যে মন দেবেন, তাতে সন্দেহ নেই।
জিতের সঙ্গে দেবের সম্পর্কও খুব একটা ভাল নয়। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর প্রসেনজিতের যেমন ‘বাজার শেষ হয়ে গিয়েছে’ বলা হয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। যথারীতি জিতের সেটা ভাল লাগেনি।
ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলে থাকেন, দেবের সঙ্গে তুলনার বিষয়টি তার পছন্দ নয়। তিনি অনেক সিনিয়র। ‘দুই পৃথিবী’ ছবিতে দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। সেখানে জিত্ই ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। দেব সেকেন্ড লিড। দেবের কোনও ছবিতে জিত্ কি কখনও দ্বিতীয় লিড হতে রাজি হবেন?
চ্যালেঞ্জ নিবি না : দেব কিন্তু পরপর চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাচ্ছেন। কমার্শিয়াল ছবি থেকে অন্য ধারার ছবি করেছেন। প্রযোজক হিসেবেও ঝুঁকি নিয়েছেন। এখন বিনয়-বাদল-দীনেশকে নিয়ে ছবি করতে চলেছেন। বাংলা ছবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা বড় ঝুঁকির তো বটেই। জিত্ বা প্রসেনজিত্ কেউই প্রযোজনার ক্ষেত্রে এতটা রিস্ক নেননি। তবে দেবের উদ্যোগকে প্রসেনজিত্ সাধুবাদ জানান।
ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন সমস্যায় দেব আর প্রসেনজিৎকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে। প্রসেনজিতের মুখে যেমন দেবের প্রশংসা শোনা গিয়েছে, আবার নিন্দেও করেছেন। দেবও বিষয়টা জানেন। বুম্বাদার পরামর্শ দেব মন দিয়ে শোনেন। দেবের রাজনীতিতে আসায় প্রসেনজিতের মত ছিল না। কিন্তু তত দিনে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ‘চাঁদের পাহাড’-এর জন্য নিজের ‘জাতিস্মর’-এর মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছিলেন প্রসেনজিত্। সেটা অবশ্য নামী প্রযোজকের চাপে না কি দেবের জন্য, তা নিয়ে সন্দেহ আছে!
দেবের সঙ্গে জিতের সম্পর্কও শীতল। আগে প্রকাশ্যে উষ্ণতা দেখা যেত, কিন্তু সম্প্রতি ‘চ্যাম্প’ আর ‘বস টু’র রিলিজকে কেন্দ্র করে বিষয়টা আরও গোলমেলে হয়েছে। বক্স অফিসে ‘চ্যাম্প’কে পিছনে ফেলে দিয়েছে জিতের ছবি। দুই সুপারস্টারের ছবি এক দিনে মুক্তি না পেলেই ভাল হতো। এ দিকে দু’জনেই দাবি করছেন অপরপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন একই দিনে ছবি রিলিজ না করতে।
রিলিজকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যেই একটা ‘ঠান্ডা লড়াই’ চলছিল। হালকা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যও হয়েছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জুলফিকর’-এ তিন সুপারস্টারের একসঙ্গে কাজ করার একটা সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। মুখ্য চরিত্রে প্রসেনজিত্ যে বেশি ফুটেজ পাবেন, তা জানা সত্ত্বেও দেব কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। অঁসম্বল কাস্টে তার আপত্তি ছিল না। কিন্তু রাজি হননি জিত্। জানিয়েছিলেন, সৃজিতের ছবিতে মলাট-চরিত্র পেলে তবেই করবেন।
পুনশ্চ : বলিউেডর ‘ব্রাদারহুড’ এখানে প্রত্যাশা না করাই ভাল। সালমানের প্রযোজনায় অক্ষয়কুমার নায়ক হতে পারেন। কিন্তু এখানে এমন কিছু হওয়া একেবারেই অলীক। -আনন্দবাজার
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন