বৃষ্টির পানি পড়ে প্রধান বিচারপতির চেয়ারেও!
নতুন একটি ভবন নির্মাণ না করা হলে মাঠে বসে বিচারকাজ করতে হবে মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘আমি যে চেয়ারে বসি সেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্দেশ্য করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার আজীবন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে বলছি, ‘সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। আমি যে চেয়ারে বসি সেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে। নতুন একটা এনেক্স ভবন না করলে মাঠে বসে বিচার কাজ করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী বিচার বিভাগ কিভাবে চলবে?
তিনি আরো বলেন, নারী বিচারকদের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। পৃথিবীর যেকোন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকেরা অগ্রগামী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এদেশের বিচার বিভাগের অহংকার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এই পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।’
অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি।’
নারী বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রিয় নারী বিচারকেরা মনে রাখবেন বিচারকের জীবন মানেই ন্যায় বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া। আর এই দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও দেশের নারী বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা শুধু উচ্চ আদালতেরই প্রথম নারী বিচারপতি ছিলেন না। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রথম নারী বিচারক।
নাজমুন আরা সুলতানা ফতোয়া বিষয়ক মামলা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির মামলা, চারদলীয় জোট সরকার আমলে বাদপড়া ১০ বিচারপতির মামলা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ বিষয়ক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বিচারক ছিলেন।
১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুনসেফ (সহকারি জজ) হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯০ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। তিনিই দেশের প্রথম নারী জেলা জজ।
২০০০ সালের ২৮ মে নাজমুন আরা সুলতানা হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০০২ সালের ২৮ মে হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন