সন্তানকে যে কারণে মারবেন না

দু-চারটা চড়-থাপ্পড় না খেলে নাকি সন্তান মানুষ হয় না। এমন কথা প্রচলিত আছে। কিন্তু অতিরিক্ত শাসনের ফলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। সন্তান বিরক্ত করে, কথা শোনে না, বখে যাচ্ছে—এই অভিযোগগুলো হয়তো সত্য, তাই বলে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যে কারণে সারা জীবন আপনাকে আফসোস করতে হয়।

আমেরিকান সাইকোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ছোটবেলায় অনেক বেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন অর্থাৎ মার খান, তাঁরা বড় হয়ে কোনো না কোনোভাবে তার নেতিবাচক প্রকাশ ঘটান। কেননা তাঁদের সুষ্ঠু মানসিকতার বিকাশ ঘটে না। তাঁদের মনের অগোচরে ক্ষোভ জন্মায়, জেদ কাজ করে, বড় হয়ে তা ক্রোধে রূপ নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন তাঁর ছেলেবেলার গল্প। তাঁদের বাসায় এক মামা থাকতেন। মা-বাবার কড়াকড়ি শাসনের পাশাপাশি সেই মামাও অকারণে বা সামান্য ভুলের জন্য গায়ে হাত তুলতেন। প্রতিবাদ করতে পারতেন না। পরিবারের সবার ওপর অভিমান জমে তাঁর। দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ভাবতেন, কবে এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের পর পুরোপুরি মা-বাবার থেকে তিনি দূরে সরে এলেন। ছুটিতেও বাড়ি যেতেন না। হলে থাকতেন। তিনি বলেন, ‘এখনো আমার অন্যের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হয়। বয়ঃসন্ধিকালের পুরো সময়টাতে আমি নিচু হয়ে শুধু মার খেয়েছি। আজও বের হতে পারেনি সেই সমস্যা থেকে। আর ওই দূরত্ব তো ‍ঘুচলই না।’

এর সমাধান কী? মা-বাবাকে বুঝতে হবে, গায়ে হাত তুললে সন্তান সাময়িক ভয় পাবে। তবে তার মনের মধ্যে দাগ থেকে যাবে, সেখান থেকে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব নয়। তাই বলে কি শাসন করবেন না? অবশ্যই করবেন। শুরুতে বুঝিয়ে বলতে হবে। কথা না শুনলে তার প্রিয় জিনিসগুলো নিয়ে নেওয়া হবে। তাহলে সে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবে।

গায়ে হাত তুললে সন্তানের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার বোধ ও হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। পরিণত বয়সেও এই দুটো বিষয়ের কারণে তাকে কর্মক্ষেত্রে ও সংসারজীবনে সমস্যায় পড়তে হবে।
তাই সন্তানের ভালো চাইলে শাসনের ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।-দ্য ফ্যামিলি ম্যাগাজিন, আমেরিকান সাইকোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন