ভালোবাসা সব আক্ষেপ ভুলিয়ে দিয়েছে : ঝুলন

আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই প্রতিদিন ভিড় ঠেলে সুদূর কলকাতায় আসতে হত তাঁকে৷ পার্থক্য একটাই, এই মেয়েটির লক্ষ্য বাকিদের থেকে আলাদা ছিল৷ যা তাঁকে পরবর্তী জীবনেও বাইশ গজে নতুন পরিচয় দিয়েছে৷ নিত্যদিনের ভিড়ের মাঝেও যিনি নিজেকে চিনিয়ে দিলেন, তিনি ঝুলন গোস্বামী৷ লক্ষ্যে অবিচল থাকাই যাঁর মূলমন্ত্র৷ লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে আসা ‘চাকদা এক্সপ্রেস’ কলকাতা ২৪x৭-এর প্রতিনিধি শিউলি দত্ত ঘোষকে জানালেন সেই সব কথা৷

প্র: আপনার চোখে আগের বিশ্বকাপের সঙ্গে এবারের পার্থক্য কোথায়?

ঝুলন: এবারের বিশ্বকাপে সরাসরি সম্প্রচার সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট৷ প্রায় প্রত্যেক ম্যাচ দেখতে দেখতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে৷ আর সেমিফাইনালে অষ্ট্রেলিয়াকে হারানোয় সমর্থকদের প্রত্যাশা বেড়েছিল৷ আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছিল৷ তবে ফাইনালে হারার পরেও যে অভ্যর্থনা আমরা পেয়েছি তা একথায় unbelievable. পার্থক্য বোধহয় এখানেই৷ একটা দল ফাইনালে পৌঁছে হেরে গিয়েও এই উষ্ণতা পেল৷ এটাই ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীদের বৈশিষ্ট্য৷

প্র: আপনার চোখে আগের বিশ্বকাপের সঙ্গে এবারের পার্থক্য কোথায়?

ঝুলন: এবারের বিশ্বকাপে সরাসরি সম্প্রচার সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট৷ প্রায় প্রত্যেক ম্যাচ দেখতে দেখতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে৷ আর সেমিফাইনালে অষ্ট্রেলিয়াকে হারানোয় সমর্থকদের প্রত্যাশা বেড়েছিল৷ আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছিল৷ তবে ফাইনালে হারার পরেও যে অভ্যর্থনা আমরা পেয়েছি তা একথায় unbelievable. পার্থক্য বোধহয় এখানেই৷ একটা দল ফাইনালে পৌঁছে হেরে গিয়েও এই উষ্ণতা পেল৷ এটাই ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীদের বৈশিষ্ট্য৷

প্র: ফাইনালে যখন আপনি ব্যাট করতে নামলেন তখনও তো ম্যাচ হাতের বাইরে যায়নি!

ঝুলন: জানি না কি হল! এত কাছে এসেও কাপ হাতছাড়া হওয়ায় আক্ষেপ৷ তবে এই চ্যাপ্টারটা মনে রাখতে চাই না৷ অভিজ্ঞতার অভাবের থেকেও বড় হল আমরা চাপের মুখে টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারিনি৷ ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।

প্র: ম্যাচ যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে সময় মাঠের ধারে বসে থাকা সতীর্থদের অনুভূতি ঠিক কেমন ছিল?

ঝুলন: অগণিত দর্শকদের মত আমরাও জিততেই চেয়েছি, কিন্তু পারিনি৷ আসলে মাঠে নেমে খেলার উত্তেজনা অন্যরকম হয়। হারতে কার ভালো লাগে! কিন্তু ব্যর্থতা পিছনে ফেলে সাফল্যের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হয়৷প্র: একজন মেয়ে হয়ে আজকের এই জায়গায় পৌঁছনো৷ কেমন ছিল সেই জার্নি?

ঝুলন: প্রথম দিকে একেবারেই সহজ ছিল না৷ চিন্তাভাবনা ছিল না যে, ক্রিকেট নিয়ে কেরিয়ার গড়ব৷ সেই চাকদা থেকে কলকাতায় আসতে হত প্রতিদিন লোকাল ট্রেনে করে৷ খেলাটাকে ভালোবাসতাম, তাই কঠিন পরিশ্রম কখনই গায়ে লাগেনি। ধীরে ধীরে সাফল্য ধরা দিল৷ আর পিছনে ফিরতে হয়নি৷

প্র: আপনার অনুপ্রেরণা কে?

ঝুলন: আমার মা৷ প্রায় প্রতি বাঙালির ঘরের মা যেমনভাবে সবার মনে থাকেন আদর্শ হয়ে৷ আমার জন্য মা অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন৷ সময়মত শাসন আবার প্রয়োজনমত আদর করেছেন এবং ভালো কাজে উৎসাহ দিয়েছেন৷ এই নিয়েই আমার মা৷ এককথায় মায়ের জন্যই আজ আমি এতটা পথ চলতে পেরেছি৷

প্র: আপনি যখন শুরু করেছিলেন তখন আর এখনের মধ্যে মেয়েদের খেলাধূলো আসার পার্থক্য কোথায়?

ঝুলন: অনেকটাই তফাত৷ শেষ চার বছরে প্রায় সব খেলায় ভারতীয় মেয়েরা অসামান্য সাফল্য পেয়েছে৷ সানিয়া থেকে সাইনা৷ মেরি কম থেকে দীপা৷ সবাই নিজের সেরাটা দিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে৷ এর ফলে সব খেলাধূলোর প্রশাসনিক স্তরেও অনেক সক্রিয়তা এসেছে৷ অনেক পেশাদারিত্ব এসেছে৷ শেষ কয়েক বছরে মেয়েদের এই সাফল্য নতুনদের আরও বেশি খেলাধূলোয় আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করেছে৷

প্র: বিশ্বরেকর্ডের পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?

ঝুলন: রেকর্ড কোনও না কোনও দিন তৈরি হয় আবার ভাঙবে৷ তবে সেই কৃতিত্ব যদি নিজে ছোঁওয়া যায় সেটা বোধহয় আলাদা আনন্দ৷ আমিও তার বাইরে নয়৷ তারপর যখন চারিদিক থেকে অভিনন্দন পেতে থাকলাম, মনে হল ক্রিকেট খেলোয়াড় হতে পারায় জীবন সার্থক৷ যে দেশে ক্রিকেট খেলা অলিখিত জাতীয় খেলার মর্যাদা পায়, সেই দেশের ক্রিকেটার হতে পেরে আমি ধন্য৷

প্র: এত খ্যাতির পরেও এমন কিছু কি রয়েছে, যা আবার ফিরে পেতে চান?

ঝুলন: চাকদার সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো৷ তখনও আমি খেলতাম,কখনও দাদাদের সঙ্গে, সেই খেলাতে ছিল শুধুই আনন্দ৷ ছিল না কোনও টেনসন কোনও প্রত্যাশার চাপ৷ তাই সেই দিনগুলো আমি খুবই মিস করি৷ হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা মনে হয় সবার জন্যই আলাদা অনুভূতি আনে৷

প্র: ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা ?

ঝুলন: অন্য কিছুই ভাবছি না৷ শুধুই খেলে যেতে চাই৷ যতদিন খেলে আনন্দ পাব ক্রিকেট খেলে যাব৷

প্র: পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কি মেসেজ দিতে চান?

ঝুলন: শুধু খেলোয়াড় নয় জীবনের যে কোনও দিকে সাফল্য পেতে গেলে প্যাশন এবং পজিটিভ চিন্তা থাকাটা জরুরি৷ অ্যান্ড লাস্ট নট দ্য লিস্ট ইজ হার্ডওয়ার্ক৷ কঠিন পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই৷

জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রেই সাফল্যের পথ মসৃণ হয় না৷ আরও কঠিন সাফল্য ধরে রাখা৷ সবাই সেটা পারে না৷ তাই সবার পক্ষে শীর্ষে পৌঁছনোও সম্ভব হয় না৷ যাঁরা পারেন তাঁরা হয়ে ওঠেন সচিন, সৌরভ, রাহুল৷ মেয়েদের ভিতর থেকেও যাঁরা পারছেন তারাই হয়ে উঠেছেন সাইনা, সিন্ধু, সানিয়া, দীপা ও ঝুলন৷ এরাই যে পরবর্তী প্রজন্মের রোল মডেল৷-কলকাতা২৪।