লতিফের চোখে আ’লীগ নেতৃত্ব ব্যর্থ
‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের কর্মকাণ্ড ষড়যন্ত্র কি না তা ইতিহাসের গবেষণার বিষয় হলেও এই রায় ষড়যন্ত্রকারীদের একটি বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
তার দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিক কৌশল নিলেও, অন্যরা ষড়যন্ত্রকে উস্কে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন।’
রায়ের পর্যবেক্ষনে দেশের একক নেতৃত্বের বিষয়ে মন্তব্যের সমালোচনা করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং মতামত ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুবিরোধী শক্তি যত বিরূপ কদর্য মন্তব্য করেছে তার চেয়েও অপকৃষ্ট বলে অনেকেই ক্ষুব্ধ। ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীনতা যুদ্ধ একটা ধারাবাহিক পরিণতি। কোনোক্রমেই দুর্ঘটনা বা কোনো বহিঃশক্তির প্রণোদনা নয়।’
তিনি বলেন, ধাপে ধাপে চরম ও পরম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যখন উদ্দেশ্যহীন ও লুটেরার গনিমতের মালে রূপ নিচ্ছে প্রতীয়মান হয়, তখন বঙ্গবন্ধু চতুর্থ সংশোধনীর পথে হাঁটেন। নেতার এটা দায়বদ্ধতা। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ এই জায়গাগুলোকে আঘাত করছে বলে ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকৃতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সবটাই শেখ মুজিবের নেতৃত্ব-নির্দেশনায়। এখানে কোনো দাবিদার নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক ও অযাচিতভাবে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব নিয়ে অসঙ্গত ইঙ্গিত দেওয়া হয়, যে ইঙ্গিত ঘোষক বিতর্কের অনুকূলে যায় ভাবলে দোষের কিছু নেই।’
এই রায়ের পক্ষাবলম্বনকারীদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগী গোষ্ঠি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাঙালি যখনই বাংলাদেশি ঘোষিত হয়, তখন থেকেই ভজঘট শুরু। পরিচয় স্পষ্ট হলেই গুজব আর হুজুগ কমবে। সংকটের গোড়ায় হাত দিতে হবে।
রায়ে চতুর্থ সংশোধনীকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী বলার সমালোচনা করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আইন ও আইনের শাসন নিয়ে যারা গালভরা বুলি কপচান, তারা কি জানেন না জংলি আইনকে আমাদের দেশের মাননীয় বিচারকগণ সাংবিধানিক আইনের চেয়ে উপরে স্থান দিয়েছেন?’
সংসদকে অপরিপক্ক বলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা অপরিপক্ক বলায় গণমানুষের মানবিক অধিকারই শুধু নয়, মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শিত হয়েছে। সংবিধান রাষ্ট্রের বেতনভোগী কাউকে এমন অবজ্ঞা প্রদর্শনের অধিকার দেয়নি।
আওয়ামী লীগের সাবেক এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, উচ্চ আদালত সংসদ সম্পর্কে বড়ই অপমানকর মন্তব্য করেছেন। আসলে এ আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬ ধারা স্রেফ ৭২ এর সংবিধানের পুনঃস্থাপন। এই পুনঃস্থাপন সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী কী করে তা বোধগম্য নয়। এমন হতে পারে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর স্বার্থবিরোধী।
এই রায় নিয়ে বিতর্ককে ‘রাজনৈতিক দ্বন্ধ’ ভাবতে পারলে খুশি হতেন জানিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী কোনো বিষয় নয়, আমার ধারণা বিষয়টি অন্য কোথাও আড়াল করে রাখা হয়েছে। আমরা দূর থেকে হাত পা ছুড়ছি, আসল বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি না। ব্যাপারটা কি এমন?
তিনি বলেন, ‘মানুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, জঙ্গিবাদ, হলি আর্টিজান করে কিছু হলো না, অসাংবিধানিক শক্তিকেও ব্যবহারের সুযোগ কমে গেছে। বারবার ব্যবহার করে অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে গেছে। তাই এটি সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করা- ভেবে দেখা দরকার।’
তবে এখানেই ‘সব শেষ নয়’ জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিরাজ করছে শেখ হাসিনার। তিনি পুনরায় বিল আনবেন এবং আরো জোরালো শর্ত দিয়ে সংশোধনী পাস করবেন। এভাবে পাল্টাপাল্টি করে ‘কিছু হবে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন