এক কিশোরীর চেষ্টায় বন্ধ হলো আরেক কিশোরীর বাল্য বিয়ে
বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদের সকল আয়োজন শেষ হয়েছে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের চাইড়া গ্রামের মুশুরিখোলা শামসুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম আক্তারের (১৪)। পাত্র সাভারের তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের মো. শহিদুল্লাহ ও খাইরুন বেগম দম্পতির ছেলে জাকির হোসেন (২৮)। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। মেয়ে পক্ষের কাছে ছেলে সুপাত্র হওয়ায় তাকে যৌতুকও দেয়া হয়েছে।
বিয়ের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। শতাধিক লোকের খাবার রানা-বান্নাও সমাপ্তির পথে। বরের অপেক্ষায় যখন বাড়ির সকলে তখন এই বাল্য বিয়ের খবর পান সাভারের এক কলেজ ছাত্রী। নাম তার মুক্তা আক্তার মনি। তার বয়সও এখন ১৮ হয়নি। লেখাপড়া করে সাভার কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। অগ্রগামী শিশু পরিষদ, আর আইচ স্টেপ ইয়োথ ফোরাম ও সাভার সনাকের ইয়েচ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ইতিমধ্যে মুক্তা বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
তাই বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে মুক্তা শুক্রবার সকালেই প্রতিকুল আবহাওয়া উপেক্ষা করে গিয়ে হাজির হয় কনের বাড়িতে। কিন্তু কনে তখন বিয়ের সাজ করতে গেছে স্থানীয় এক বিউটি পার্লারে। কনেকে না পেয়ে কনের বাবা নূরুল ইসলাম ও মা নিলুফা বেগমকে বাল্য বিয়ের কুফল ও সরকারের আইন বিরোধী অপরাধ সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করেন। এর মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর রহমত আলী, কয়েকজন সাংবাদিক ও আশেপাশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে হাজির হন। মুক্তা ও তাঁদের হস্তক্ষেপে অবশেষে বন্ধ হয়ে যায় শিশু মরিয়মের বিয়ে।
কনের বাবা নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ের বিয়ের বয়স ঠিক আছে। কিন্তু স্কুলে ভর্তির সময় জন্ম সনদে বয়স কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া এলাকার ভেতরে একটি ভালো ছেলে পেয়ে ধার দেনা করেও মেয়ের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় তাঁর পরিবারের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি লক্ষাধিক টাকা খরচ করে রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে পড়ার আশঙ্কার কথাও জানান। মেয়েকে লেখাপড়ার করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি সরকার মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দেয়। কিন্তু এখানকার স্কুলে খরচ তো দুরের কথা সময় মতো বেতন পরিশোধ না করতে পারলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন শিক্ষকরা। ‘
মুক্তা আক্তার মনি বলেন, মরিয়মের মাকে বুঝানোর পর তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং তাৎক্ষণিক কিশোরী মেয়েকে বিয়ে না দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেন। এ সময় তাঁরা উপযুক্ত বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তবে ছেলে পক্ষকে যৌতুক হিসেবে দেয়া নগদ এক লাখ টাকা, গহনা ও ফার্নিচারসহ প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা স্থানীয় মেম্বরসহ প্রতিবেশীগণ ফেরত দিতে সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর রহমত আলী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাল্য বিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেখানে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে বাল্য বিয়ে ও এর পরিণতি সংক্রান্ত বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কোন সচেতন নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। তাই এ অবস্থা উত্তরণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। হালিমাদের বাঁচাতে হবে। ‘
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন