গরুতে সয়লাব ঢাকা
জমে উঠেছে ঢাকার গরুর হাট। নির্ধারিত হাটের বাইরেও পুরো রাজধানী গরুর হাটে সয়লাব হয়ে গেছে। বিভিন্ন হাট ঘুরে ক্রেতারা তাদের পছন্দের গরু দেখছেন, কেউ কেউ দামাদামিও করছেন। এবার গরুর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে বলে ক্রেতারা জানান। তবে গরু কেনার মধ্যে মোটা গরু কেনায় ক্রেতারা বেশ সতর্ক।
গরুতে সয়লাব ঢাকা কোরবানির অস্থায়ী হাটগুলোতে। এরপরও ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে বিভিন্ন হাটে। এসব গরু হাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও অলিগলিতে রাখা হচ্ছে। আগ্রহী ক্রেতারা হাট ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন আর দামাদামি করছেন।
কিন্তু হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া কেউ কিনছেন না। এখনও পুরোপুরি বিক্রি শুরু হয়নি। বিভিন্ন হাট ঘুরে কোথাও পশু বিক্রির তেমন খবর জানা যায়নি।
তবে গাবতলী হাটে রুটিন বেচাকেনার অংশ হিসেবে প্রতিদিনই কম-বেশি গরু বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য হাটভর্তি গরু নিয়ে পশু ব্যবসায়ী ও ইজারাদাররা মুখিয়ে রয়েছেন ক্রেতার অপেক্ষায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বছিলা পশুর হাট কানায় কানায় ভরে উঠেছে। এরপরও ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী সড়কের দু’পাশের খালি জায়গায় শেড তৈরি করে চমৎকারভাবে পশু রাখার জায়গা করা হয়েছে।
এবার সড়কে পশু উঠানোর ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাট ইজারাদাররা সেটা মেনে চলার চেষ্টা করছেন। তবে শেষমেশ এমনটা থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কবরস্থান সংলগ্ন পশুর শেডে কথা হয় পাবনা জেলার বেড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, কোরবানির উদ্দেশ্যে ১০টি গরু নিজ বাড়িতে লালন-পালন করেছি। ট্রাকে করে সেই গরু নিয়ে এসেছি।
এখনও একটিও বিক্রি হয়নি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করতে পারব।
তবে আগ্রহী গ্রাহকরা দামাদামি করছেন। অনেক ক্রেতা দু-তিনবার করেও তার গরু দেখেছেন বলে জানান। সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, গরুগুলো ৭০-৯০ হাজার টাকার মধ্যে দাম পেলে বেচে দেব। হাজারীবাগ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বেড়িবাঁধ হাটেও প্রচুর গরু উঠেছে। তবে এ হাটটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়নি।
হাট ব্যবস্থাপনায় জড়িত আবদুল হাকিম সোমবার বলেন, শেষ সময়ে হাটের ইজারা পাওয়া গেছে। এ কারণে হাটের প্রস্তুতি শেষ করতে একটু সময় লেগেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে আজকের মধ্যে (সোমবার) পশুতে হাট কানায় কানায় ভরে উঠবে।
লালবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গার হাটে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ সড়কের একাংশ দখল করে গরু বাঁধা হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মানিকগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে আমি পশু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
প্রতিবারই রাজধানীর হাটগুলোতে আমি পশু বিক্রি করি। এবারও এ হাটসহ আরও দুটি হাটে পশু উঠিয়েছি। এ হাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩০টি গরু উঠিয়েছি। ভারতের গরু কম আসায় লাভ ভালো হবে বলে আশা করছি।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) এলাকার সাতটি অস্থায়ী হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সোমবার। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৫টি হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট)।
এর বাইরে গাবতলীর স্থায়ী হাটে কোরবানির পশুর জমজমাট পসরা বসেছে। আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবার (৩১ আগস্ট) থেকে রাজধানীর পশুর হাটগুলোর বেচা-বিক্রি জমে উঠবে বলে আশা করছেন পশু ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরেই হাটগুলোতে ট্রাক ভরে আসছে গরু, ছাগল ও মহিষ।
দিন যাচ্ছে, পশুভর্তি ট্রাক আসার পরিমাণ বাড়ছে। শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠের অস্থায়ী হাটে সোমবার দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা।
তবে দীর্ঘ যাত্রায় অনেক গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। ট্রাক থেকে নামানোর সময় পাটাতনে শুয়ে পড়া একটি গরু অনেকক্ষণ টানাটানি করেও নামাতে পারছিলেন না কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী আবুল কাসেম ও তার সঙ্গীরা।
এ ব্যবসায়ী জানান, যানজটের কারণে হাটে আসতে তাদের প্রায় তিন দিন সময় লেগেছে। এ সময় গরুকে যথেষ্ট খাবার খাওয়াতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন হাটে আসা একটি গরুর দাম সর্বনিন্ম ৪০-৪৫ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ছোট আকৃতির গরুর দাম ৪০/৪৫ থেকে ৫০/৫৫ হাজার টাকায় চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
আর মাঝারি আকৃতির গরু প্রতিটির দাম ৬০/৬৫ থেকে ৮০/৮৫ হাজার টাকা। বড় আকৃতির গরুর দাম ১ লাখ টাকার ওপরে। ১ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে বেশি গরুর সরবরাহ।
তবে এর চেয়ে বেশি দামেরও গরু রয়েছে। রাজধানীর মেরাদিয়া ও গাবতলী হাটে ৫ লাখ, ৬ লাখ, ৭ লাখ টাকার অনেক গরুরও দেখা মিলেছে। মেরাদিয়া হাটে একটি গরুর দাম ১২ লাখ টাকা হেঁকেছেন একজন ব্যবসায়ী।
তবে অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলোচনায় আসার জন্য ওই ব্যবসায়ী গরুটির দাম ১২ লাখ টাকা হেঁকেছেন। ওই গরুটির দাম হবে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
ডিএসসিসির পশু হাট : মেরাদিয়া বাজার, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা ও শ্যামপুর বালুর মাঠ। এছাড়া সামসাবাদ মাঠ (আরমানিটোলা সংলগ্ন), কাউয়ার টেক (সাদেক হোসেন খোকা মাঠ), হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মাঠ, পোস্তগোলা শিল্প এলাকার খালি জায়গা, লালবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা ও গোলাপবাগ মাঠ।
ডিএনসিসির পশু হাট : গাবতলী পশুর হাট (স্থায়ী), উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের প্রথম গোল চত্বর সংলগ্ন খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের (আফতাবনগর) পূর্বাংশের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলা বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, মিরপুর-সেকশন-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএস সংলগ্ন সংলগ্ন ফাঁকা জায়গা ও খিলক্ষেত ৩০০ ফুট সড়ক ও দক্ষিণ পাশের বসুন্ধরার প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন