রাজধানীর নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানিতে এবারো সাড়া নেই

পরিবেশের সুরক্ষার স্বার্থে দুই বছর ধরে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করে আসছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগে গতবার তেমন সাড়া মেলেনি। এবারো তাই ঘটেছে। খুব কমসংখ্যক নগরবাসী যাচ্ছেন নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করতে। বাড়ির গ্যারেজ, সামনের রাস্তায়, গলির মাথায়, মসজিদের সামনেই বেশি কোরবানি হচ্ছে।

নির্ধারিত স্থানে না যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্দিষ্ট স্থান বাসা থেকে দূরে। তাছাড়া সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনারও সংকট রয়েছে।

রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, মগবাজার, বেইলি রোড, ফার্মগেট, পুরানা পল্টন, হাতিরপুল, ইস্কাটন ও এর আশেপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।

কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য রাজধানীতে এক হাজার ১৭৪টি স্থান নির্ধারণ করেছে দুই সিটি করপোরেশন। নির্ধারিত সেই জায়গাগুলোতেও কোরবানি হচ্ছে, তবে তা সংখ্যায় কম।

পরিবাগ এলাকায় থাকেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি জানান, মোতালেব টাওয়ারের পেছন দিকে একটি সিটি করপোরেশনের পশু জবাইযের নির্ধারিত জায়গা আছে। কিন্তু সেখানে একটি প্যান্ডেল ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বাড়ির গ্যারেজেই পশু জবাই করেছি। তার ওপর একটি ফ্ল্যাটেই প্রায় ২০ থেকে ৩০টি পশু জবাই হয়। সেখানে এই প্যান্ডেলে বড়জোড় ১০টি পশু কাটা যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় পশু জবাই করতে দেখা যায়।

ইস্কাটন সবজি বাগান জামে মসজিদের সামনে পশু কোরবানি দিতে দেখা যায়। সেখানে মসজিদের পানি পাইপে এনে নিজেরাই রাস্তা থেকে রক্ত ধুইয়ে দিচ্ছেন তারা।

এখানে কথা হয় হাবিবুর রহমান নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ৩০টি পশু জবাই হবে। দুপুরের মধ্যেই ময়লাগুলো সিটি করপোরেশন নিয়ে নিলে বিকালে বৃষ্টি হলেও আর অসুবিধা হবে না। আর এ ময়লা পরিষ্কার করতে দেরি করলে বিকালে ভারী বর্ষণ হলে গতবারের মতো তা ছড়িয়ে পড়বে রাস্তায়। আমরা ময়লা এক জায়গায় রেখে দেব, কিন্তু সেটা তো সিটি করপোরেশনের লোকদের দ্রুত নিতে হবে।

তবে এখনো বর্জ পরিষ্কারে সিটি করপোরেসনের কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি।

এদিকে রাজধানীতে সকালের দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হলেও তাতে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বিকালে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আর সেটা হলে বৃষ্টিতে কোরবানির পশুর রক্ত ও বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী।

সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল বলেন, যারা নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানি করবেন না তারা যেন বর্জ্য সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় ফেলেন। তাতে আমরা দ্রুত তা অপসারণ করতে পারবো।

গত ২৮ আগস্ট এক সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা গাফিলতি করলে বর্জ্যের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করুন। পোস্ট দেয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই এলাকার কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে। এজন্য সিটি করপোরেশনের মনিটরিং টিম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করবে। আর হটলাইনের (০৯৬১১০০০৯৯৯) আমাদের জানাতে পারবে নগরবাসী।

এসময় তিনি বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে ডিএসসিসি এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এজন্য এবছর আমাদের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কর্মী মাঠে থাকবে। এছাড়া পর্জাপ্ত গাড়ি ও যন্ত্রপাতি থাকবে।

ঢাকার বংশালে অনেককে দেখা যায় নির্ধারিত জায়গায় পশু কোরবানি দিতে। বাড্ডা এলাকায় দেখা যায় নির্ধারিত জায়গার কোরবানি দিচ্ছে, কিন্তু তা সীমিত। আর যারা এসব জায়গায় পশু কোরবানি দিচ্ছে তাদের জন্য সিটি করপোরেশন ময়লা রাখার জন্য ব্যাগ দিয়েছে।