আমেরিকা কেমন আক্রমণ চালাতে পারে উত্তর কোরিয়ায়?

‘আপনি কি উত্তর কোরিয়ায় আক্রমণ চালাবেন?- উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গতকাল এ প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন – ‘আমরা দেখবো। ‘

উত্তর কোরিয়ায় সত্যিই যদি আক্রমণ চালানো হয়- তা ঠিক কি ধরনের হতে পারে? উত্তর কোরিয়াকে আর কোনওভাবে সামলানোরও কি কোনও উপায় আছে?

রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক জাস্টিন ব্রংক বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তিতে যতই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হোক না কেন, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে আসলে আমেরিকার হাতে বিকল্পের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এর একটি হচ্ছে: ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক আঘাত। মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনীর এ ধরনের আক্রমণ চালানোর যে ক্ষমতা রয়েছে তা পৃথিবীর সর্বাধুনিক।

উত্তর কোরিয়ার কাছে সমুদ্রে থাকা সাবমেরিনগুলো ‘টোমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং বি-টু জঙ্গিবিমান থেকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ – শুনলে মনে হবে এটা বেশ আকর্ষণীয় একটা পরিকল্পনা।

আমেরিকার যে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের পেনিট্রেটর বোমা রয়েছে তা দিয়ে মাটির অনেক নিচে সুরক্ষিত স্থাপনারও ক্ষতিসাধন করা সম্ভব। তবে উত্তর কোরিয়া আগেই সতর্কবার্তা পেয়ে গেলে মার্কিন পক্ষেই বিপদের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার হাতে রুশ, চীনা এবং নিজেদের তৈরি নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার ব্যবস্থা রয়েছে যা গত ৫০ বছর ধরে গড়ে ওঠা – তাই তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটা যে ঠিক কী রকম, কতটুকু আধুনিক বা কতটা প্রস্তুত – তা বের করা খুব কঠিন।

কোনও আমেরিকান বিমান ভূপাতিত হলে তার ক্রুদের মুক্ত করতে গিয়ে দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, যদি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক, ক্ষেপণাস্ত্র, নিয়ন্ত্রণকক্ষের মতো স্থাপনাগুলো বা নেতৃত্বের ওপর সফল হামলা চালানো যায়ও – তবু তারা অন্তত দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর হামলা চালাতে পারবে।

দুই কোরিয়ার সীমান্তে শত শত রকেট ও কামান বসানো রয়েছে- যা দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের প্রায় এক কোটি লোকের ওপর মারাত্মক হামলা চালানো যাবে।

এগুলো সংখ্যায় এত বেশি যে মার্কিন বাহিনীর পক্ষেও তা ধ্বংস করতে কয়েক দিন লাগবে এবং তার আগেই মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি হয়ে যাবে। এ জন্যই দক্ষিণ কোরিয়া এরকম হামলার বিরোধী, কারণ উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া শুধু সাধারণ কামান ও রকেট দিয়েই দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারবে।

আরেকটি বিকল্প হলো উত্তর কোরিয়ার ভেতরে ঢুকে পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার বিশাল সেনাবাহিনী, তাদের আর্টিলারির ক্ষমতা, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যুহ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অনিচ্ছা – এসব কারণে এরকম অভিযানের সম্ভাবনাও খুবই কম। তাছাড়া এরকম অভিযান চালাতে হলে মার্কিন বাহিনীকে কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্য প্রস্তুতি নিতে হবে, পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এর আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো দুই পক্ষেই লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা।

১৯৫০’র দশকে কোরিয়ান যুদ্ধে চীন জড়িয়ে পড়েছিল উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নিয়ে – যাতে তার সীমান্তের ওপারে একটি পশ্চিমা মিত্র কোরিয়া কায়েম না হতে পারে। চীন হয়তো এখনও এরকম পরিস্থিতি দেখতে চাইবে না। তাছাড়া যুদ্ধের পর একটি দেশকে পুনর্গঠন করাটাও হবে এক অত্যন্ত কঠিন কাজ। অন্য আরেকটি বিকল্প হলো উত্তর কোরিয়াকে সামলে রাখার চেষ্টা জোরদার করা। এতে ঝুঁকি সবচেয়ে কম। কিন্তু এতে হয়তো কাজও হবে সবচেয়ে কম। কারণ এখন পর্যন্ত নানা ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু এতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ঠেকানো যায়নি। এ ধরনের মোতায়েন আরো বাড়াতে থাকলে উত্তর কোরিয়া একে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নেবে।

রাশিয়া ও চীনও এতে আপত্তি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্য ক্ষেত্রে – যেমন ইউরোপ ও পূর্ব চীন সাগরে- নানা সমস্যা তৈরি করতে চেষ্টা করবে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া, গুয়াম এবং জাপানে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং সৈন্যের সংখ্যা বাড়াতে পারে – কিন্তু এটা হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এতে উত্তেজনা ক্রমশই বাড়তে থাকবে।