রোহিঙ্গাদের সাহায্যে আগ্রহী ইরান

মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইরান। দেশটির দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ত্রাণবাহী কার্গো বিমান অবতরণের অনুমতি চেয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পাওয়া মাত্রই ত্রাণ নিয়ে ইরানের বিমান আকাশে উড়বে।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় জাতিসংঘকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক টুইটার বার্তায় বুধবার তিনি বলেন, একটি জাতিকে এভাবে নির্মূলের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহল এখনও নিশ্চুপ। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেয়া হলে মিয়ানমার এভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর দমন পীড়ন চালাতো না।

এদিকে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর এমন বর্বরোচিত নির্যাতনের বিষয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও উদ্বিগ্ন। খ্রিস্টধর্মের লাখ লাখ মানুষও এমন হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে। ভ্যাটিকানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও মিয়ানমারের এমন ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন।

বুধবার এই বিষয়ে আলোচনা করতে ভ্যাটিকানের একটি প্রতিনিধিদল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় দু’পক্ষই জাতিগত সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মত দেন। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও একমত হয় দু’পক্ষ।

তেহরানে পল রিচার্ডের নেতৃত্বে ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি দলটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলকে হাতে হাত ধরে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যাটিকানের উদ্বেগের জন্য এসময় কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। ভ্যাটিকানের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের রক্ষার দাবিতে সব সময় পাশে থাকবে ভ্যাটিকান।

রোহিঙ্গা নাগরিকদের উপর নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় ইরান গোড়া থেকেই উদ্বিগ্ন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বিষয়টি নিয়ে তুরস্ক, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।

ফোনে প্রত্যেকের সঙ্গে পৃথকভাবে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় তার দেশের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে সমস্যার আশু সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে করণীয় দিক কি হতে পারে, তা নিয়ে কথা বলেন।

ভাভেদ জারিফ এসময় মুসলিম বিশ্বকে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করা উচিৎ বলে মত দেন। তিনি রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে ইরান সব সময় প্রস্তুত বলেও জানান।

ইরান রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধের জন্য মিয়ানমারকে জানিয়েছে বলেও দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এজন্যে আন্তর্জাতিক মহলকে শুধু লোক দেখানো নয়, বরং কার্যকরভাবে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষার জন্য গোড়া থেকেই সরব ইরান। গত বছর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতন শুরু করলে তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে দেশটির মানুষ।