মৃত্যুও তাঁদের বন্ধুত্বকে ছিন্ন করতে পারেনি

কাসিফ হামিদ সাব্বিরের (২৪) জন্মদিন ছিল গত বৃহস্পতিবার। ফেসবুকে বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁর দীর্ঘ জীবনও প্রার্থনা করেন। কিন্তু সে জীবন থেমে গেছে মাত্র এক দিন পর, শুক্রবার বিকেলে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তাঁর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন ছোটবেলার বন্ধু মোহাম্মদ আবদুল আহাদও (২৩)।

গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের ফরেস্ট গেট এলাকায় আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কে সাব্বিরদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এতে মোটরসাইকেলের পেছনের আসনে থাকা আহাদ উড়ালসড়ক থেকে নিচের রাস্তায় পড়ে যান। আর সাব্বির ছিটকে পড়েন উড়ালসড়কেই। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। মোটরসাইকেলে চালকের আসনে ছিলেন সাব্বির।

চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র আহাদ। সাব্বির পড়তেন হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের মধ্যম গোসাইলডাঙার ফকিরহাট এলাকায়। চার ভাইবোনের মধ্যে সাব্বির তৃতীয়।

তাঁর বাবা মৃত আবদুল হামিদ। অন্যদিকে আহাদ পরিবারের একমাত্র ছেলে। তাঁর বাবা আবদুর নূর ও মা রোজিনা বেগম হজ পালনের জন্য এখন সৌদি আরবে আছেন। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভর্তি ছিল সাব্বিরের ফেসবুক পাতা। পরদিন তাতে ছিল শোকের বার্তা। শাহরিয়ার রহমান নামের একজন লেখেন, ‘বন্ধু চলে গেলি। অনেক কিছু এখনো বলা হয়নি আমার।’

আহাদ ও সাব্বিরের বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকেই। দুজনই এসএসসি পাস করেছেন আগ্রাবাদের হাতেখড়ি স্কুল থেকে। পরে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তাঁরা। কিন্তু বন্ধুত্ব ছিল অটুট, মৃত্যুও তা ছিন্ন করতে পারেনি।

গতকাল বিকেলে দুর্ঘটনার পর দুই বন্ধুর মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। খবর পেয়ে সেখানে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। দুই বন্ধুর মৃত্যুর বিষয়টি তখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল তাঁদের।

শুক্রবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে হাসপাতালে ছুটে আসেন সাব্বিরের বড় বোন যুঁথি আক্তার। দুর্ঘটনার খবর জানানো হলেও মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর কাছে গোপন রাখেন স্বজনেরা। উৎকণ্ঠা নিয়ে স্বজনদের কাছে যুঁথি জানতে চান, ‘সাব্বিরকে অনেকবার কল দিয়েছি। একবারও ধরেনি। সে কল ধরছে না কেন?’ পরে তাঁকে বাসায় নিয়ে যান স্বজনেরা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন আহাদের খালাতো ভাই মোমিনুল হক। তিনি বলেন, ‘দুপুরে পাড়ার মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়েছি। বিকেলে শুনি আহাদ নেই।’

সাব্বির ও আহাদ প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে যেতেন বলে জানান অন্য বন্ধুরা। গতকাল দুপুরে জুমার নামাজ শেষে সাব্বিরের সঙ্গে মুঠোফোনে সর্বশেষ কথা হয় বন্ধু ওমর ফারুকের। সাব্বির ফোন করে তাঁকে আগ্রাবাদে যেতে বলেন।

কিন্তু আগ্রাবাদে পৌঁছার আগেই সাব্বির ও আহাদ মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফারুক বলেন, দুই বন্ধু সব সময় একসঙ্গে থাকতেন। মৃত্যুও তাঁদের বন্ধুত্বকে ছিন্ন করতে পারেনি, একসঙ্গেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।