রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম রোহিঙ্গা সংকট। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই সংকটের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বাংলাদেশের সামনে এসে পড়েছে। তাতে যেমন কিছু সামাজিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনই রয়েছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে খুব কৌশলের সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশে অনেকগুলো সমস্যার সৃষ্টি হবে। তার মধ্যে রয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা।
বিষয়গুলো সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা হয়তো আমরা কোন না কোনভাবে সামাল দিতে পারবো। হয়তো অন্যান্য দেশের সহায়তায় সেটা সামাল দেওয়া খুব কঠিন হবে না। কিন্তু এত রোহিঙ্গা আসার কারণে যে সামাজিক সংকট তৈরি হবে সেটা সামলানো খুব কষ্টসাধ্য হবে। কেননা আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গারা মূল স্রোতে মিশে যাওয়ায় এবং সারাদেশে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেমন নানান ধরনের সমস্যা তৈরি হবে, তেমনই রোহিঙ্গাদেরও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে মাকসুদ কামাল বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করছে। এ বিষয়ে একে অন্যকে দায়ী করছে। সেই জায়গায় স্থিতি এনে সবার মতামত নিয়ে একসঙ্গে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় সেই সিদ্ধান্তে আসাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
এবছর বাংলাদেশের মানুষ বেশ কিছু দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। বন্যা, পাহাড় ধস, ঝড় সবই আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের উপর। তার উপর এই মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুর্যোগ আমাদের পরিবেশগত দিক থেকেও সমস্যায় ফেলছে। কেননা তারা বাস করার জন্য যেখানে সেখানে আবাস গড়ছে, পাহাড় কাটছে, পাহাড়ি এলাকায় থাকার জন্য বন উজার করছে। ফলে সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আর বাংলাদেশকেই এ সমস্যার ফল ভোগ করতে হবে।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা তিনি বলেন। সেটা হলো পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক। চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মন মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব জনমত গঠন করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের আবার মিয়ানমারে পাঠানো। তবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের ভাষাগত ও চেহারাগত মিল রয়েছে, সেই সুযোগে তারা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে আরও বড় যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা হলো জঙ্গিবাদ।
‘তারা অনেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং তাদের চিহ্নিত করাও কষ্টকর হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য। ফলে সমাধান টানা খুব কষ্টসাধ্য হবে।’
একই কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাকে স্থান দিয়েছে। সেটা স্বল্প সময়ের জন্য হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করতে গেলে এতে নানান সমস্যার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
‘পরিবেশগত সমস্যা হয়তো আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে পারবো, কিন্তু অন্যান্য সমস্যার সমাধান কষ্টকর হবে। রোহিঙ্গাদের সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রশাসন চেষ্টা করছে কিন্তু সেই কাজটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ’, বলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
পাশাপাশি আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। যদিও সেখানে বেশ কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক রেখে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই ব্যাপারে বাংলাদেশকে আরও শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ স্থান দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের এই মানবতাকে কেউ যেন দুর্বলতা ভাবতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পারে।সূত্র : চ্যানেল আই অনলাইন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন