মঙ্গলের মতো করে ৮ মাস আগ্নেয় দ্বীপে

২০৩০ সালকে মঙ্গল অভিযানের বছর বলে আগেই ঘোষণা করে রেখেছে নাসা। কিন্তু মঙ্গলে পাড়ি দিয়ে অভিযাত্রীরা যেন কোন অমঙ্গলের মুখে না পড়েন, সে জন্য সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি।

মূত্রের অণুগুলি ভেঙে তা থেকে খাবার তৈরি করা, টানা অনেক দিন ভারশূন্য থাকার পরীক্ষার পাশাপাশি গত ৮ মাস ধরে চলছিল ধৈর্যের এক দীর্ঘ পরীক্ষা। রবিবার শেষ হয়েছে তা।

পরিবার থেকে বহু দূরে জনমানবহীন পরিবেশে কেমন ভাবে যুঝতে পারে মানুষ, তা দেখতে গত জানুয়ারিতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনা লোয়া নামে এক জনশূন্য দ্বীপে বাসা বেঁধেছিলেন নাসার ছ’জনের একটি দল। দ্বীপটি আসলে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যদিও আপাতত ঘুমিয়ে রয়েছে। টানা আট মাস সেখানে কাটিয়ে রবিবার লোকসমাজে, চেনা পরিবেশে ফিরে এসেছেন তারা।

কেন এই পরীক্ষা? নাসা জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন একা থাকতে থাকতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারেন অভিযাত্রীরা। খাদ্যাভাবে পড়তে পারেন। সমস্ত বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ভিন্ন গ্রহে নামতে গিয়ে মহাকাশযানের কোন ক্ষতি হলে, মেরামতির কাজটিও সারতে হবে নভশ্চরদের। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে লাল মাটিতে চাষবাস, বেঁচে থাকার খুঁটিনাটি জানতে হবে সবই। আর তার জন্য শক্ত ও সুস্থ রাখতে হবে মন। সে কারণেই মনোসমীক্ষার এই দীর্ঘ পরীক্ষাটি যৌথ ভাবে চালিয়েছে নাসা ও হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়।

জনহীন দ্বীপে ১২০০ বর্গফুটের উল্টোনো বাটির মতো দেখতে একটি বাড়ি। গত ক’মাস সেখানেই কাটিয়েছেন চার জন পুরুষ ও দুই নারী গবেষক। বাড়িটিতে ছোট দু’টি ঘর, ছ’জনের ছোট-ছোট ছ’খানা ঘুমোনোর জায়গা, একটি রান্নাঘর, গবেষণাগার ও দু’টি টয়লেট। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের কথা মাথায় রেখে সকলেই এই আট মাস স্পেসস্যুট পরে কাটিয়েছেন। বাড়ি থেকে বেরোলে, সব সময় বেরিয়েছেন দল বেঁধে। লালগ্রহে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অন্নসংস্থান। হাওয়াই-পরীক্ষায় সে কাজটি করেছেন দলের জীববিজ্ঞানী জোশুয়া এহরিল্চ। ফলিয়েছেন গাজর, গোলমরিচ, বাঁধাকপি, সর্ষে, টোম্যাটো, আলু, পার্সলে। মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে কোন সিগন্যাল পৌঁছায় ২০ মিনিটে। মৌনা লোয়া দ্বীপেও ছিল সেই ব্যবস্থা।