উখিয়া ক্যাম্পে চলচ্চিত্রের শুটিং
উখিয়া ক্যাম্প। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ভিড়। বৈরী আবহাওয়া। বৃষ্টি হচ্ছে। মাথা গোঁজার জন্য নেই এতটুকু আশ্রয়। পানি জমে আছে। কাদা-মাটি। এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে সবাই। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে তা। তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন, ওরা বাঙালি সন্ত্রাসী, ওরা মিয়ানমারের কেউ না। এদিকে উখিয়া ক্যাম্পের মানুষগুলোর মুখ মলিন, চেহারায় অনিশ্চয়তার ছাপ। কী হবে তাদের ভবিষ্যৎ! একটি চিত্রনাট্য। ছবির নাম ‘রোহিঙ্গা’। পরিচালনা করছেন সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড। ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন তিনি। যৌথভাবে প্রযোজনা করছেন সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ও শবনম শেহনাজ চৌধুরী।
‘রোহিঙ্গা’ ছবির শুটিং শুরু করেছেন ডায়মন্ড। গতকাল মঙ্গলবার শুটিং করেছেন নাফ নদী, শাহপরী দ্বীপ আর টেকনাফে। আজ বুধবার সকাল থেকে শুটিং করছেন উখিয়া ক্যাম্পে।
আজ ডায়মন্ড যখন কথা বলছেন, তখন ওদিকে নায়িকা আরশি প্রস্তুত হচ্ছেন শট দেওয়ার জন্য। তার আগে মহড়া করছেন। তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘আরা বাঙালি ন। আরা জুলুমকারী ন। আরা আরাকানি মুসলমান। আরা রিফুজি জিন্দগি ন চাই। আরা দেশ আরে ফিরি দাও।’
ডায়মন্ড বললেন, ‘এখন এই দৃশ্যটি ধারণ করব। খুব প্রতিকূল পরিস্থিতি। এর মাঝেই আমরা কাজ করছি। ছবিতে আমরা বাস্তব ঘটনাগুলো ফুটিয়ে তুলছি। যাতে ছবিটি দেখে আজ থেকে অনেক বছর পরও দর্শক বুঝতে পারেন, আসলে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কী ঘটেছিল। এর এক ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাই আমরা সবদিক বিবেচনা করে কাজটি করছি।’
২০১২ সালে যখন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন এই ছবির পরিকল্পনা করেন সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড। কাহিনি আর চিত্রনাট্য তৈরি করে ফেলেন। ডায়মন্ড বললেন, ‘ছবির কাজ শুরু করার জন্য অনুকূল পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এবার মনে হলো ছবির কাজ শুরু করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। আমরা খুব দ্রুত কাজ করছি।’
উখিয়া ক্যাম্পে আরও তিন দিন শুটিং হবে। এরপর মিয়ানমারের সেট তৈরি করা হবে। ওখানে মিয়ানমারের দৃশ্যগুলো ধারণ করা হবে।
সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড নাটকের পরিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নাচোলের রানী’ (২০০৬)। ১৯৫০ সালের নাচোলে কৃষক সাঁওতাল বিদ্রোহের পটভূমিতে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। ২০০৯ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘গঙ্গাযাত্রা’। এতে অভিনয় করেন ফেরদৌস, পপি, সিমলা প্রমুখ। ২০১০ সালে তিনি ‘নাচোলের রানী’ ও ‘গঙ্গাযাত্রা’ চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য কলকাতার অতন্দ্র সাংস্কৃতিক সংসদ থেকে অতন্দ্র পদক লাভ করেন। ‘গঙ্গাযাত্রা’ চলচ্চিত্রের জন্য ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। চলচ্চিত্রটি ২০১৪ সালে বাচসাস পুরস্কারে আটটি বিভাগে পুরস্কার পায়। ২০১৩ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পদ্মাপাড়ের জেলেদের জীবন-জীবিকার বিপর্যয়ের গল্প নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন ‘অন্তর্ধান’। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ফেরদৌস, নিপুণ প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি একটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘বাষ্পস্নান’। এতে অভিনয় করেছেন কলকাতার সমদর্শী দত্ত আর বাংলাদেশের আইরিন সুলতানা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন