বর্মি সেনাদের টহলে আতঙ্কে জিরোপয়েন্টের রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট তুমব্রু খালের ওপারে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে আট হাজার রোহিঙ্গা। বাঁশের খুঁটি, পলিথিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে গড়ে তোলা বস্তিতে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারছে না, এ পারেও এগোতে পারছে না।

উভয় সংকটে এই রোহিঙ্গাদের ৫০ গজ দূরে মিয়ানমার সেনা পুলিশ টহল দিচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার করছে। মাটিতে পুঁতে রাখা হচ্ছে মাইন।

বুধবার সকালে এপারে ত্রাণ নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

খালের এপারে আসা মিয়ানমারের তুমব্রু ঢেকিবনিয়া গ্রামের হোক্কাট্রা বা চেয়ারম্যান আকতার আলমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, হোক্কাট্রা হিসাবে সেখানকার সেনাসদস্য ও পুলিশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তার বাড়িঘর সহায় সম্পত্তি রক্ষায় আশ্বস্ত করেছিল তারা। ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একদল সেনা ঢেকিবনিয়া গ্রামে ঢুকে শতাধিক বাড়িঘর জালিয়ে দেয়। ৯ জন যুবককে বেঁধে নিয়ে যায়। পরে শুনেছেন তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।

আকতার আলম বলেন, ‘এ ঘটনার পর সেখানে আর থাকা নিরাপদ মনে করিনি। ওই রাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তুমব্রু জিরো পয়েন্ট খালের পাড়ে দুটি ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছি।’ ইতিমধ্যে মিয়ানমার সেনারা তার দুটি বাড়ির একটি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং অন্যটিতে পুলিশ ক্যাম্প করেছে বলে জানান তিনি।

আকতার আলম ঢেকিবনিয়া ত্যাগ করার খবর পেয়ে পাশের গ্রাম ফকিরাবাজার, পানিরছড়া সহ ছয়-সাত গ্রামের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার রোহিঙ্গা খালের পাড়ে আশ্রয় নিয়েছে।

পানিরছড়া গ্রামের পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মো. সালাম। স্ত্রী-ছেলেমেয়েসহ আটজন সদস্য নিয়ে খালের পাড়ে ঝুপড়িতে আছেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা দিতে পারছি না। বাধা-বিপত্তির কারণে খাল পার হয়ে এ দেশে আসার কোনো সুযোগ নেই। খালের এপার থেকে ত্রাণসামগ্রী দিলে খাবার জোটে। তা না হলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করতে হচ্ছে।

খালের এপারে ত্রাণ নিতে আসা ফকিরাবাজার গ্রামের জেবুন্নেছা (২৮) জানান, ৫ ছেলেমেয়ে নিয়ে পলিথিনের ভিতরে সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ছেলেমেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

এভাবে অনেকেই তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানান এপার এসে। আবদু সালাম নামে বয়োজ্যেষ্ঠ এক রোহিঙ্গা বলেন, এখানে ত্রাণসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে, তবে পায়খানা না থাকার কারণে রোহিঙ্গাদের ঝোপঝাড়ে যত্রতত্র পায়খানা করতে হচ্ছে। দুর্গন্ধে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় জিরো পয়েন্টে পেছনের পাহাড়ে ১৮/২০ জন মিয়ানমার সেনা অবস্থান নিয়ে মাটির মধ্যে কী যেন পুঁতে রাখতে দেখা গেছে। তাদের মারমুখি ভাবভঙ্গি দেখে রোহিঙ্গারা আতঙ্কে চিৎকার শুরু করেন। পরে বিজিবি আশ্বস্ত করলে তারা শান্ত হয়।

তুমব্রু বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার মো. হাকিম জানান, খালের ওপারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা শুধু ত্রাণসামগ্রী ও ওষুধ নেওয়ার জন্য এপারের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আসতে পারবেন। এ ছাড়া এদেশের অভ্যন্তরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি এও বলেন, যারা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসেন সেগুলো গ্রহণ করে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বিতরণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিচালনা করার জন্য দুজন হেড মাঝি ও ৬৪ জন ব্লক মাঝি নির্বাচিত করে দেওয়া হয়েছে। তিনি মিয়ানমার অংশের নো ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের বাধ্যগত আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে। কাঁটাতারের ওপারে মিয়ানমার সেনা পুলিশ চলাচল করার কারণে রোহিঙ্গারা আতঙ্কে থাকে।

সম্প্রতি তুমব্রু রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শনকালে বীর বাহাদুর এমপি বলেছেন, উখিয়ার বালুখালী এলাকায় বনভূমির ২ হাজার একর জায়গার ওপর রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য শেড তৈরি ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে।