রাখাইনে বৌদ্ধদের স্কুল খুললেও বন্ধ আছে রোহিঙ্গাদের

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল জাতিগত রাখাইন শিশুদের জন্য পুনরায় খুলেছে মিয়ানমার। রোববার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় রাখাইন শিশুদের জন্য স্কুল পুনরায় চালু করা হয়েছে। রাখাইনে স্কুল খুললেও একই এলাকা থেকে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালাচ্ছেন বলে বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

গত আগস্টে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার রাখাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার পর ব্যাপক সেনা অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

অভিযান শুরুর পর থেকে রাখাইনের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার অর্ধেক বাংলাদেশে পালিয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই বাংলাদেশমুখী ঢলের কারণে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গারা অভিযোগ করে বলছেন, রাখাইনের উগ্র বৌদ্ধ ও সেনাবাহিনী তাদের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।

এএফপি বলছে, সহিংসতায় হিন্দু, বৌদ্ধ হিসেবে পরিচিত জাতিগত রাখাইনদের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

দেশটির শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, সহিংসতার মূল কেন্দ্র মংডু এবং বুথিডংয়ে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় স্কুলগুলো পুনরায় চালু করা হয়েছে। রোববার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাখাইন বৌদ্ধদের জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি আছে মিয়ানমারের। রাখাইন বৌদ্ধ অধ্যুষিত জনবহুল এলাকায় স্কুল পুনরায় চালু করা হয়েছে জানিয়ে গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলছে, ‘জাতিগত গ্রামের স্কুলগুলো নিরাপদ এবং সুরক্ষিত আছে।’

চলমান ব্যাপক নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে রাখাইনের শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বাঙালি গ্রামগুলোর স্কুল পুনরায় চালু করার ব্যাপারে আমাদের আরো চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন।’

মিয়ানমারে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি নেই। অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করে তাদেরকে মিয়ানমারের বৈধ স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি।

এদিকে, বুথিডংয়ের আরো প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি দেয়ার আশায় আটকা আছেন। বুথিডংয়ের এই রোহিঙ্গারা বলছেন, অবরুদ্ধ গ্রামে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার ফুরিয়ে আসছে। এছাড়া প্রতিবেশিরা তাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।

সরকার বলছে, গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা বিপজ্জনক পথ পাড়ি দেয়ার ব্যাপারে তাদের মন্তব্য জানিয়েছে।