বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক পবিত্র, নোংরা বলবেন না : হানিপ্রীত

দুজন শিষ্যকে ধর্ষণের দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের। তার পর থেকেই রাম রহিম সম্পর্কে একের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এমনকি পালিত কন্যা হানিপ্রীত ইনসানের সঙ্গে বাবার শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে এসেছে।

এ ব্যাপারে হানিপ্রীত ভীষণ হতাশ। মেয়ের সঙ্গে তার বাবার ‘স্বাভাবিক’ সম্পর্ক নিয়ে এভাবে কাদা ছোড়াটা মোটেই ভাল চোখে নিচ্ছেন না তিনি। তার ভাষায়, ‘আমি বুঝতে পারছি না। বাবা-মেয়ের এমন পবিত্র সম্পর্ককে মানুষ কোথায় নামিয়েছে! আমি জানতে চাই, একজন বাবা তার মেয়ের মাথায় হাত রাখে না? এক জন মেয়ে তার বাবার কাছে যায় না?’

তবে সাবেক স্বামী বিশ্বাস গুপ্তকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এর আগে বিশ্বাস গুপ্ত দাবি করেছিলেন, রাম রহিমের সঙ্গে নগ্ন অবস্থায় হানিপ্রীতকে দেখেছেন তিনি।

সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কান্নায় ফুঁপিয়ে উঠেছেন হানিপ্রীত। কোনো রকমে সেই কান্না চাপার চেষ্টা করছেন সেটাও স্পষ্ট। চোখ-মুখ কার্যত ফ্যাকাসে হয়ে গেছে লাস্যময়ী হানিপ্রীতের।

ভিজে যাওয়া চোখে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বারে বারে একটা কথাই বলছেন হানিপ্রীত; তিনি নির্দোষ। রাম রহিমকেও নির্দোষ বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জানান, খুব শিগগিরই পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করবেন।

রাম রহিমকে যেদিন পঞ্চকুলার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেদিন তার সঙ্গে ছিলেন হানিপ্রীত। কিন্তু, রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পরেই পঞ্চকুলায় চূড়ান্ত তাণ্ডব চালায় ডেরা সাচ্চা সৌদার ভক্তেরা।

হানিপ্রীতের নির্দেশেই সেই তাণ্ডব হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ প্রসঙ্গে হানিপ্রীত বলেন, ‘আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে এখন নিজেকেই নিজে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছি। চূড়ান্ত মানসিক চাপে রয়েছি অামি। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একা মেয়ে। আর এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আমাকে প্রশাসন অনুমতি না দিলে কীভাবে আদালত চত্বরে যেতাম! কী ভাবেইবা বাবার সঙ্গে হেলিকপ্টারে উঠতাম! তারাই আমাকে অনুমতি দিয়েছিল।;

তিনি আরও জানান, ‘আমি কোথায় ছিলাম, তাণ্ডবের সময়! আর বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর ভীষণ ভেঙে পড়ি। কীভাবে আমি জড়িত থাকব বলুন তো?’

চলতি বছরের অাগস্টের শেষের দিকে রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার দিন থেকেই পলাতক ছিলেন হানিপ্রীত। সীমান্ত পেরিয়ে তিনি নেপালে চলে গেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

কিন্তু, হানিপ্রীতের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। গত সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্টে তার আইনজীবী ট্রানজিট অ্যান্টিসিপেটরি জামিনের আবেদন করেন। আদালত সেই অাবেদন খারিজ করে দেয়।

ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকার হানিপ্রীত বলেন, ‘আমি কোথাও যাইনি। নেপাল তো নয়ই। ভারতেই ছিলাম। আসলে সকলের সামনে আসতে পারিনি, এতটাই ডিপ্রেশনে ছিলাম। পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করব।’

হানিপ্রীতের অভিযোগ, ‘ডেরায় হাজার হাজার নারী রয়েছেন। সেখান থেকে মাত্র দু’জনের অভিযোগকেই গুরুত্ব দেয়া হল কেন? এবং সেটাও চিঠির বয়ানের ভিত্তিতে! কেন ওই নারীরা সামনে অাসলেন না?’

ওই সাক্ষাৎকারে হানিপ্রীত আরও জানান, তিনি নির্দোষ। কোনো ঘটনার সঙ্গেই তার সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি বাবা রাম রহিমও নির্দোষ। তার দাবি, ‘সত্য একদিন সামনে আসবেই। তখন গোটা দুনিয়া আমার কথা মিলিয়ে নিতে পারবে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমরা প্রবলভাবে দেশভক্ত। দেশকে প্রচণ্ড ভালবাসি। পাশাপাশি আমি আইন মেনে চলা এক জন নারী। তাই এই তদন্তে সব রকমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।’