সরকারের কিসের এত ভয়?
সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং (অস্থায়ী ভিত্তিতে বাইরে থেকে) পদ্ধতিতে লোক নিয়োগকে বৈষম্যপূর্ণ বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) আয়োজিত ‘ব্যবসায় ও মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে রিয়াজুল হক এ কথা বলেন।
রিয়াজুল হক বলেন, সংবিধানে বড় করে সমতার কথা বলা আছে। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানেই সুযোগ-সুবিধাবিহীন লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘এভাবে লোক নিয়োগ কেন? সরকারের কিসের এত ভয়? আন্দোলনের? তাদের ন্যায্য দাবি থাকলে সরকার পূরণ করে দেবে আর অন্যায্য হলে ব্যবস্থা নেবে।’
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নান সেমিনারে প্রধান অতিথি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ও ইউএনডিপির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জি বিশেষ অতিথি ছিলেন।
কাজী রিয়াজুল হকের সঞ্চালনায় ইউএনডিপির মানবাধিকার কর্মসূচির প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা শর্মিলা রসুল সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, ব্যবসায়ে মানবাধিকারের জন্য সুরক্ষা, শ্রদ্ধা ও প্রতিকার—জাতিসংঘের এই নীতি অনুসরণ করতে হবে।
অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান হঠাৎ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর ‘মিশন’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানান। বলেন, তারা দাতা নয়। আসে মূলত ঋণ দিতে। নরম সুদের ঋণ। ঋণ দেওয়ার জন্য থলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সুতরাং তৃতীয় বা চতুর্থ মিশন এসেছে বলার কোনো মানে নেই।
ব্যবসায়ের ৯০ শতাংশই বেসরকারি খাতের দখলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের সঙ্গে যে ব্যবসায়ের সম্পর্ক আছে, তা তো দেখাই যায়। তবে মানবাধিকার কমিশন গঠন, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নসহ অনেক পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নিয়েছে, আরও নেবে। সরকারকে সময় দিতে হবে।
কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, কোনো ব্যবসায়ীকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের জন্য তিনি কতটুকু কাজ করছেন, তা-ও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতাকে (সিএসআর) দান হিসেবে না দেখে অধিকার হিসেবে দেখতে চান। করের টাকা থেকে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য ‘অসুস্থতা তহবিল’ গঠনেরও পরামর্শ দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান মানবাধিকার রক্ষায় ব্যবসায়ীদের আরও অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। আর ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জির আবেদন হচ্ছে, কোনো অনিয়মের দায়ে বেসরকারি খাতকে শাস্তি দেওয়ার আগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে কাজ করা আইনজীবী উত্তম কুমার বলেন, সিএসআর সাধারণ মানুষের অধিকার। সিএসআর বাবদ অর্থ খরচ করলেই হবে না; দেখতে হবে কাউকে ঠকানো হচ্ছে কি না। ব্যাংকের চাকরিতে তিন বছরের বন্ড নেওয়াকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনায় আরও অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার মনি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এজিং সাপোর্ট ফোরামের সভাপতি হাসান আলী, অটিজম নিয়ে কাজ করা মনিরা ইসলাম প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন