অন্যের জমি দখলে রেখেছেন পিপিএম পদকপ্রাপ্ত উপ-কমিশনার

মাগুরায় স্থানীয় দুই যুবক ও নিজের বডিগার্ডকে দিয়ে এক ব্যবসায়ীর জমি খালি করে নিজের দখলে নিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি, পুলিশ সুপার মর্যাদার) মো. আবদুল্লাহ আরেফ। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে দুটি মামলার কার্যক্রম চলাকালীন আদালতের নির্দেশনা ছাড়াই জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে নিজ দখলে নেন ডিসি। এরপর সেখানে তিনি বাবার নামে ফলক বসান।

অথচ ২০০৯ সালে সিআইডিতে থাকাকালে কর্ম-সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশের সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পেয়েছিলেন এ কর্মকর্তা।

এ বছরের মার্চে মাগুরা সদর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে জমি দখলের ঘটনাটি ঘটে। তার নির্দেশে এবং তার পক্ষে জমি-দখল করেন তার দুই বডিগার্ড কেএমপির তৎকালীন কনস্টেবল (বর্তমান এএসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং কনস্টেবল মো. মাসুদুর রহমান এবং স্থানীয় বদর ওরফে মিন্টু নামের আরেকজন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আসা এক অভিযোগে ডিসি আরেফের দুই চাচা রেজাউল করিম ও ফয়জুল কবির (জমির মালিকানা দাবিদার) উল্লেখ করেন, ১০ বছর আগে পৈতৃক জমিজমা আরেফের উপস্থিতিতে ভাগাভাগি করা হয়। সেই মোতাবেক সবাই যার যার অংশ ভোগদখল করছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার পর ক্ষমতার জোরে চাচাদের জমি দখল করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছেন আব্দুল্লাহ।

প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ডিসি আবদুল্লাহ আরেফের বিরুদ্ধে কেন ‘অসদাচরণের’ বিভাগীয় মামলা করা হবে না, এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চলতি মাসের ২৩ তারিখে একটি অভিযোগপত্র ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মন্ত্রণালয়। নোটিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের (শৃঙ্খলা-২ শাখার) সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন এবং উপসচিব তাহমিনা বেগমের স্বাক্ষর রয়েছে।

তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর আরেফকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি (আরেফ) বিতর্কিত জমিতে পুলিশি ভয় দেখিয়ে স্থানীয় জনৈক বদর ওরফে মিন্টুর সহযোগিতায় দেয়াল নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখল করেন। জমিতে আপনার পিতার নাম ফলক স্থাপন করেন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘দখলকৃত জমিটি দেওয়ানি আদালত মাগুরার সহকারী জজ আদালত মামলা নম্বর ৭৯/২০১৭ এবং মাগুরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামলা নম্বর ৬২/২০১৭ বর্তমানে চলমান থাকা সত্ত্বেও একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে আপনি (আরেফ) এই জমি দখল করেন যা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও বিধিমালা) ১৯৮৫ এর ৩ (বি) বিধি মোতাবেক অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিসি আরেফকে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশের উত্তর সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে পৃথক কমিটি করে অধিকতর তদন্ত করা হবে।

এ বিষয়ে ডিসি আরেফের বক্তব্য জানতে চাইলে রোববার দুপুর তার সরকারি নম্বরে ৬ বার (১৪:৪০, ১৫:৫৩, ১৬:০৭, ১৬:১১, ১৬:৩৬, ১৬:৫৯ টায়) ফোন দেয়া হয়। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদকের নাম-পরিচয় ও বক্তব্যের বিষয়বস্তু লিখে তাকে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও এরপরের পদের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে নিয়োগ পান। যেহেতু এ ঘটনায় একটি কার্যক্রম চলছে তাই এ বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের কোনো বক্তব্য নেই। তবে বিষয়টি আমরাও যথাযথভাবে দেখছি। যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রক্রিয়া মেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিসি আবদুল্লাহ আরেফ ২০তম বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে ২০০১ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে এএসপি হিসেবে যোগদান করেন।-জাগো নিউজের সৌজন্যে