যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে নিতে অক্সফোর্ডে ভর্তির লোভ!

তোপ দেগেই চলেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী রায়া সরকার। সম্প্রতি ভারত সহ নানা দেশের নামী-দামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের হাতে ছাত্রীদের যৌন হেনস্থার সরাসরি অভিযোগ এনে এখন শিরোনামে তিনি।

এই ঘটনারই সূত্র ধরে রায়া আরও এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতের এক জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন রায়া সরকার। আমেরিকা থেকে ই-মেলে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে রায়ার অভিযোগ, যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত অধ্যাপকরা অভিযোগকারিনীদের ফোন করছেন। এমনকী, তাঁরা যাতে রায়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বয়ান দেন সে জন্য নাকি চাপও দিচ্ছেন এই সব অভিযুক্ত অধ্যাপক। কারণ, যৌন হেনস্থার অভিযোগে যে অভিযুক্ত শিক্ষকদের তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন তাতে এই সব অধ্যাপকদের নাম রয়েছে। রায়ার দাবি, এমনকী, কাউকে কাউকে অক্সফোর্ডে অ্যাডিমশন পাইয়ে দেওয়ারও লোভ দেখানো হচ্ছে।

ই-মেল-এ দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে রায়া আরও জানিয়েছেন যে নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন তাতে ২০ বছর আগের ঘটনাও রয়েছে। রায়া নিজেই বলেছেন, ২০ বছর পরে এই সব ঘটনাকেও সামনে নিয়ে আসা হল? এটা স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে।

তাঁর মতে, হলিউড সিনেমা প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টাইনের ঘটনার পর এখন সকলেই যৌন হেনস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন।

নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের যৌন হেনস্থা নিয়ে তাঁর কাছে নানা সময়ে বহুজনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই কারণে তাঁদের হয়ে তিনি মুখ খুলেছেন। রায়া তাঁর সাক্ষাৎকারে এটাও পরিস্কার করে দিয়েছেন যে তিনি নিজে কখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনওভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হননি। এই বিষয়ে বহু সময়ে বহু জনের কাছে নানা কথা শুনলেও তাঁর এমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি পড়াশোনা করেছেন সেখানে শিক্ষকরা তাঁর সঙ্গে কৌশলী সম্পর্ক রেখেই চলাফেরা করতেন বলেও এই সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন রায়া।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই ছাত্রীর দাবি, তাঁর মনে হয়েছে প্রত্যেকেরই এই নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আচার-ব্যবহার নিয়ে অবগত থাকা উচিত। তাই আরও বেশি করে নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সেখানে কাজ করা কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন।

আগামী দিনে যাঁরা এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এইসব শিক্ষকের কাছে যাবে তাঁরা যেন এদের চরিত্র সম্পর্কে অবগত থাকেন। না হলে আড়ালে আড়ালে দিনের পর দিন ক্ষমতার অপব্যহারকারী শিক্ষকরা ছাত্রীদের লাগাতার যৌন হেনস্থার করার সাহস দেখিয়ে যাবেন।

এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধবাদী কিছু নারীবাদীর বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন রায়া। সাক্ষাৎকারে রায়া জানিয়েছেন, যারা এমনটা করছেন তাঁদের অতিত ঘাঁটলেই দেখা যাবে এরা কোথাও না কোথাও ক্ষমতাবান পদে বসে আছেন। এঁরা কার থেকে এমন সব পদ পেয়েছেন এই নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।

রায়া জানিয়েছেন, ফেসবুকে তিনি যৌন হেনস্থা নিয়ে মুখ খোলার পর এবং তালিকা প্রকাশের পর বহু ছাত্রী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দোষীরা যাতে শাস্তি পায় তা সকলেই চাইছেন। দিনে অন্তত হাজার তিনেক এসএমএস আসছে বলে জানিয়েছেন রায়া। অভিযুক্তদের তালিকায় থাকা একই শিক্ষকের বিরুদ্ধেও একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে দাবি করেন রায়া। নতুন করে অভিযোগকারীদের মধ্যে ভারতের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

রায়ার দাবি, ইতিমধ্যেই শিক্ষকের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্থার শিকার এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সেই ছাত্রী খুব শিগগিরি এফআইআর দায়ের করতে চলেছ বলেও দাবি করেছেন রায়া।

সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া