দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ভৈরব রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলা শুরু

দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলা শুরু হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে আগামী ৯ নভেম্বর।
শুক্রবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেসের অতিক্রমের মধ্য দিয়ে যাত্রা হলো এই নবনির্মিত সেতুর।
এ সময় সেতুর প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুল হাই ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতুর ভৈরব পাড়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে চালক ও যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান।
প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই জানান, সেতুটি আগামী ৯ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধন সামনে রেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভৈরবে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে সেতুটির ভৈরব প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ঢাকার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের দিল্লী থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মুদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের সময় এপারের আশুগঞ্জ থেকে একটি ট্রেন সেতু পেরিয়ে ওপারে ভৈরব যাবে।
উদ্বোধন পরে হলেও এখন থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী সব আপ ট্রেন নতুন এই সেতু দিয়ে চলবে বলে জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজ সুবর্ণ ট্রেনের পর বেলা পৌনে ১২টায় নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন এই সেতু দিয়ে অতিক্রম করে। চট্টগ্রাম-ঢাকা, সিলেট-ঢাকা, নোয়াখালী-ঢাকা রেলপথে চলা সব আপ ট্রেন নবনির্মিত সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে।
ট্রেন চলাচল শুরু হলেও নুতন সেতুর লাইনে এখনো সিগনালিং ব্যবস্থার কাজ শেষ হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থায় সিগনাল দিয়ে আগামী কয়েক দিন ট্রেন চলবে।
দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি আশুগঞ্জের রেলসেতু শ্রমিক দুলাল সরকার। তিনি বলেন, ‘১৬-১৭ মাস কাজ করেছি এই ব্রিজে। আজকে প্রথম ভৈরব দ্বিতীয় রেলসেতুতে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়েছে। তা দেখে মনটা ভরে গেল।’
নতুন লাইনে ট্রেন চালু হওয়ার ফলে যাত্রীদের আর বিলম্বে পড়তে হবে না বলে আশা করছেন মো. সুজন মিয়া নামের একজন যাত্রী।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার অমৃত লাল সরকার জানান, বহু প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুতে আজ আপলাইনে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন চলা শুরু হয়েছে। এ আপলাইন চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাত্রার সময় কমে আসবে।
সেতুটি চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মধ্যে ট্রেন চলাচলের সময় কমবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে করা যাবে ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে। তিতাস সেতুও চালু হলে ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইনে কোনো রকম ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল করবে।
মেঘনা নদীতে আগে থেকে একটি রেলসেতু রয়েছে। ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের নির্মিত সেতুটি দিয়ে এত দিন দুই দিকের ট্রেনই চলাচল করত। এখন কেবল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীগামী ডাউন ট্রেন চলবে পুরনো সেতু দিয়ে।
দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকন জেভির সঙ্গে চুক্তি হয় সরকারের। একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মিটারগেজ লাইনে নির্মিত সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৮৪ মিটার। ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকায় তিন বছরে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা সময় নিয়ে চার বছরের মাথায় কাজ শেষ হয়। এতে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১৫ কোটি টাকা। সেতুর ১২টি পিলারের মধ্যে ৮টি মেঘনা নদীতে পড়েছে এবং ভৈরব ও আশুগঞ্জ সীমানায় বাকি ৪টি পিলার। এ সেতুর সঙ্গে ভৈরব ও আশুগঞ্জ প্রান্তের ছয়টি ছোট সেতুর নির্মাণকাজও শেষ করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















