ট্রাম্পের এশিয়া সফর শুরু, সূচিতে আকস্মিক পরিবর্তন

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এশিয়া সফর শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স ও বিবিসি বলছে, শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সফরে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প যখন এশিয়ার পথে, তখন হঠাৎই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ তাদের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের সফরসূচিতে এক আকস্মিক পরিবর্তনের খবর দেয়। তারা জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পূর্ব এশীয় সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার ১১ দিনের সফরের মেয়াদ একদিন বাড়িয়ে ১২দিন করা হয়েছে। গত ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এশিয়ায় কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই দীর্ঘতম সফর।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সফরে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে জোটবদ্ধতা তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, সফর শুরুর আগ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট পূর্ব এশীয় সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে কারণেই সূচিতে বাড়তি দিনটি যুক্ত হয়েছে।

পূর্ব এশিয়ায় পৌঁছানোর আগে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াইতে পৌঁছান। সেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক কমান্ডের একটি ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তিনি। পরে আজ শনিবার পার্ল হার্বারে ১৯৪১ সালে জাপানি বোমাবর্ষণে নিহত মার্কিন নৌসেনাদের স্মরণে নির্মিত ইউএসএস অ্যারিজোনা মেমোরিয়াল পরিদর্শনে যান তারা।

পার্ল হার্বার থেকে শনিবারই জাপানের পথে রওনা হওয়ার কথা তার। ৫ নভেম্বর রবিবার সে দেশে পৌঁছে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত আলোচনা প্রাধান্য পেতে পারে বলে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জাপান থেকে ট্রাম্প ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছাবেন।

গত সপ্তাহেই ট্রাম্পের সহকারীরা নিশ্চিত করেছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে ট্রাম্প ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজি) নামে পরিচিত দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন না। সিউলের দক্ষিণে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রিতে যাবেন তিনি। এরপর ট্রাম্প ৮ নভেম্বর বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিং যাবেন। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তার। বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে তিনি শিকে চাপ দিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১০ নভেম্বর শুক্রবার বেইজিং থেকে ট্রাম্প ভিয়েতনাম যাবেন। এদিন ভিয়েতনামের দানাংয়ে তিনি ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনোমিক কো-অপারেশন’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিবেন। ১১ তারিখ শনিবার রাজধানী হ্যানয়ে পৌঁছাবেন তিনি। সফরের শেষ পর্যায়ে তিনি ১‌‌২ নভেম্বর রবিবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা যাবেন। ১৩ নভেম্বর সোমবার ম্যানিলায় ‘অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়া নেশন্স’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তিনি। ১৪ নভেম্বর তার এশিয়া সফর শেষ হবে। শুক্রবার সফরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ফিলিপাইনে অতিরিক্ত একদিন থাকার কথা জানান।

উল্লেখ্য, এর আগে শেষবার একই রকম দীর্ঘ এক সফরে ১৯৯১ সালের শেষদিকে এশিয়ায় এসে ১৯৯২ সালের প্রথমদিকে সফর শেষ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ. ডব্লিউ. বুশ। ওই সময় জাপানের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।