চাঙ্গা থাকতে ড্রাগ নিচ্ছে আইএস জঙ্গিরা!
নিজেকে চাঙ্গা রাখতে ক্যাপটাগান নামের একধরণের ড্রাগ নিচ্ছে আইএস জঙ্গিরা। এমনটাই অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে এই ড্রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে করতে শুরু করে তারা, অত্যধিক সাহসী হয়ে ওঠে জঙ্গিরা। দিনে চার থেকে পাঁচটা ট্যাবলেট। ম্যাজিকের মতো কাজ। শরীর যেন ‘সর্বশক্তিমান’। ঘুম, অবসাদ উধাও। খিদেও তেমন পাবে না। আঘাত লাগলেও যন্ত্রণাবোধ অনেক কম হবে। ভয়-ডর কমে যাবে। শরীরে এই সমস্ত প্রতিক্রিয়া ঘটানোর জন্যই বহির্বিশ্বে এটি নিষিদ্ধ, তবে আইএসের মধ্যে সেটাই জনপ্রিয় ‘ফাইটার ড্রাগ’ হিসাবে।
কয়েক মাস আগে ৫ কোটি ইউরো মূল্যের এই ড্রাগ, যার আসল নাম ক্যাপটাগান, বাজেয়াপ্ত করেছে ইতালীয় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে দক্ষিণ ইতালির গিওইয়া টরো বন্দরে। ভারত থেকে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এই মাদক। লিবিয়ার আইএস সৈন্যদের এই ড্রাগ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। আইএস নিজেও নাকি এই ড্রাগ তৈরি করে। আর কেনাবেচার চক্রে আইএসের সঙ্গে মিলে কাজ করে চলে মাফিয়ারাও। দীর্ঘ দিন ধরেই।
১৯৬০ সালে পশ্চিমের দেশগুলিতে ওষুধ হিসেবে ক্যাপটাগানের ব্যবহার শুরু হয়। অবসাদ, নারকোলেপ্সি (সারাদিন ঘুম ভাব) এবং অতিসক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে এই ওষুধ ব্যবহৃত হত। কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি মাত্রায়। আর তার চেয়েও ভয়ানক হল এর নেশা ধরানোর প্রবণতা। কয়েক বার খাওয়ার পরই রোগীরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়তেন।
রয়টার্সে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে অনেক দেশই এই ওষুধকে নিষিদ্ধ করে দেয়। ১৯৮৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বেআইনি ঘোষণা করে। তবে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি এর উত্পাদন। চোখের আড়ালে এর উৎপাদন এবং ব্যবসা দুই-ই সমান তালে চলে আসছে মাদবদ্রব্য হিসেবে। সিরিয়া ক্রমশ ক্যাপটাগান উৎপন্নের মূল ডেরায় পরিণত হয়। সিরিয়ার পাশাপাশি ভারত এবং পাকিস্তানেও গোপনে, খুব সস্তায় এই ড্রাগ তৈরি হয় বলে জানা গেছে।
ইতালীয় পুলিশ জানায়, ইরাক, সিরিয়ার আইএস জঙ্গিনেতারা মূলত নিজেদের সৈন্যদের মধ্যেই এই ওষুধ বিক্রি করে থাকে। প্রতি ট্যাবলেট ২ ইউরোয় বেচে তারা। আর এর থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দেয়। অর্থের পাশাপাশি আরও একটা দিক দিয়ে লাভবান হয় আইএস। এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না, যন্ত্রণা অনুভূত হয় না, নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে করতে শুরু করে, অত্যধিক সাহসী হয়ে ওঠে জঙ্গিরা। ফলে অকুতোভয় হয়ে জঙ্গি লড়াই চালিয়ে যেতে পারে তারা।
শরীরে এই ওষুধের প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে রয়টার্সকে এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন এক ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিসার। রয়টার্সে প্রকাশিত সেই খবরে তিনি বলেন, ‘‘ধরা পড়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেধড়ক পেটানো হচ্ছিল, আর তারা হাসছিল। যেন কিছুই হয়নি। এই ড্রাগের প্রভাবে শরীরে মারের যন্ত্রণাবোধও কমে যায় অনেকটা। ’’
দীর্ঘদিন ধরে এই ড্রাগ খেলে অবসাদ, অনিদ্রায় ভুগতে পারেন। হৃদযন্ত্র এবং শিরা-উপশিরা দূষিত হতে পারে, অপুষ্টিতে ভোগার ফলে ওজন কমে যাবে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন