মুখ্যমন্ত্রীর নগ্ন ব্যঙ্গচিত্র এঁকে জেলে কার্টুনিস্ট!
ভারতের তামিলনাডুর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পালানিস্বামীকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন এঁকে জেলে গেছেন এক কার্টুনিস্ট। তবে তাকে গ্রেফতার করার চব্বিশ ঘন্টা পর জামিন দেওয়া হয়েছে।
তবে তামিলনাডু সরকার বলছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটা সীমা থাকে এবং ওই ব্যক্তি তা লঙ্ঘন করেছিলেন। অন্যদিকে জি বালা নামে ওই কার্টুনিস্টের মুক্তির দাবিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদে সরব হন সাংবাদিকরা।
ভারতে সাম্প্রতিককালে রাজনীতিবিদ বা নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে ক্যারিকেচার করার জেরে অনেককেই এর আগে আটক হতে হয়েছে, তামিলনাডুর এই ঘটনা তাতে সর্বশেষ সংযোজন।
জানা যায়, রবিবার সকালে তিরুনেলভেলির পুলিশ এসে চেন্নাইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ওই ফ্রিল্যান্স কার্টুনিস্টকে। তার অপরাধ, তিনি নিজের ফেসবুক পেজে এমন একটি কার্টুন পোস্ট করেছিলেন, যাতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ই কে পালানিস্বামী, নেল্লাই জেলার পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক নগ্ন শরীরে একতাড়া নোট দিয়ে কেবল নিজেদের গোপনাঙ্গটুকু ঢাকছেন – আর তাদের সামনে আগুনে জ্বলছে একটি শিশু।
কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসনের দফতরে সুদখোরদের অত্যাচারে জর্জরিত এক পরিবার যেভাবে নিজেদের শরীরে আগুন দিয়েছিল, সেই ঘটনার সূত্র ধরেই তিনি এঁকেছিলেন ওই কার্টুন।
দিল্লিতে ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবের সভাপতি এস ভেঙ্কটনারায়ণ বলছিলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও আমলারা যেভাবে বালাকে গ্রেফতার করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। এদের সমালোচনা করার সম্পূর্ণ অধিকার ওই কার্টুনিস্টের আছে, কারণ একটি দুর্দশাগ্রস্ত তামিল পরিবার যখন তাদের কাছে বারবার সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিল এবং শেষে অসহায়ভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল – তখন তারা কিচ্ছু করেননি। ”
“রাজনীতিবিদ ও আমলাদের চামড়া যদি এতই পাতলা হয় যে তারা নিজেদের ব্যর্থতার কোনও সমালোচনাও সহ্য করতে পারবেন না তাহলে তাদের তো এই পেশায় আসাই উচিত নয়।
”
এই ঘটনায় কার্টুনিস্ট বালার বিরুদ্ধে মামলা আনা হয়েছে ভারতীয় দন্ডবিধির ৫০১ ধারায় – যাতে কোনও অবমাননাকর ছবি ছাপা বা খোদাই করা অপরাধ – এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারায়, যাতে কোনও অশ্লীল বিষয়বস্তু ইলেকট্রনিক্যালি প্রকাশ করা দন্ডনীয়।
এদিন তিরুনেলভেলি জেলা আদালত জি বালাকে জামিন দিলেও রাজ্য সরকার অবশ্য দাবি করেছে তাদের পদক্ষেপে কোনও ভুল ছিল না।
তামিলনাডুর আইনমন্ত্রী সি ভি ষণ্মুগম বলেন, “সব কিছুরই তো একটা সীমা থাকবে, না কি? যেভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এবং একজন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ-প্রধানকে অত্যন্ত কুরুচিকর ভঙ্গীতে উপস্থাপন করা হয়েছে – সেটা তো সবাই আপনারা দেখেছেন। ”
“তিনি জামিন পেয়েছেন ভাল কথা, দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাওয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু আমি বলব, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে যদিও আমরা মর্যাদা দিই – সেই স্বাধীনতারও কিন্তু একটা মাত্রা আছে। ”
জামিন পাওয়ার পর জি বালা নিজে জানিয়েছেন, তিনি কোনও খুন বা ডাকাতি কিছুই করেননি – শুধু সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন মাত্র, আর নিজের আঁকা কার্টুনের মাধ্যমে সেটা তিনি চালিয়েও যাবেন।
কিন্তু ভারতে সংবাদকর্মীরা অনেকেই বলছেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরকারের কাজকর্ম নিয়ে হাসিঠাট্টা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের বিরুদ্ধেও যেভাবে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে তাতে তাদের কাজ ক্রমশ আরও কঠিন হয়ে উঠছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন