এই মেয়েটির ঘামের পরিবর্তে বের হয় রক্ত!

বয়স মাত্র ২১। তবু কোনো এক অজানা কারণে প্রতিদিন যেন মৃত্যুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় মেয়েটার।

দোষটা যদিও তার নয়, তার শরীরের। কিন্তু এমন জীবন সে চায়নি। চায়নি এইভাবে প্রতিদিন রক্তে ভিজতে। তবু তাকে ভিজতে হয়। এত কিছুর পরেও বাঁচার আশায় এখনও ভাটা পরেনি তার। আগামীতে পরবে না, এমনই আত্মবিশ্বাসী এক মানুষের গল্প বলতে যাচ্ছি। যার শরীরে থেকে ঘামের জায়গায় প্রতিনিয়ত বেরিয়ে যেতে থাকে বিন্দু বিন্দু রক্ত। কিন্তু তবুও এক বিন্দু কমে না বাঁচার ইচ্ছা।
হঠাৎ করেই গত তিন বছর এমনটা শুরু হয়েছে।

কিন্তু কেন ঘামের জায়গায় বেরতো শুরু করেছিল রক্ত, সে উত্তর এখনও চিকিৎসক মহলের কাছে অজানা। তাই সঠিক চিকিৎসা শুরু করা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি ২১ বছরের সেই ইতালিয় মেয়েটির। তাই দৈনন্দিন জীবন বলতে তার আর কিছু নেই। আছে বলতে রক্ত ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়! এত কিছুর পরেও বাঁচার আশায় একটুও ভাটা পরেনি। সে এখনও বিশ্বাস করে একদিন এই ধাঁধার সন্ধান নিশ্চই পাওয়া যাবে। আর সেদিন সে হাতে পাবে বাঁচার মহৌষধি। বদলে যাবে তার জীবন। সে আবার ফিরবে আলোর জগতে। কিন্তু সেই দিনটা কবে আসবে বলতে পারেন? বাচ্চা মেয়েটার এমন প্রশ্নে কোনও উত্তর দিতে পারেন না ডাক্তাররা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন মেয়েটার চোখের দিকে। তাই প্রশ্নটা থেকেই যায় যে এমন বিরল ঘটনার উত্তর কি আদৌ জানা সম্ভব হবে?

বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের খেলা:
একদল চিকিৎসকের মতে ঘামের মতো রক্ত বেরনো মোটেও সম্ভব নয়। তাই এমনটা আদৌ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখা উচিত। আরও একধাপ এগিয়ে বেশ কিছু চিকিৎসক এও দাবি করেছেন যে মেয়েটি জনপ্রিয় হয়ে ওটার জন্য পুরো ঘটনাটাই সাজিয়েছে। কিন্তু কেন কেউ এইভাবে জনপ্রিয় হতে চাইবে? এই উত্তর যদিও কোনও চিকিৎসকই দিতে পারেন নি।

রক্ত বেরোয় যখন তখন?
যে চিকিৎসকের অধিনে মেয়েটির চিকিৎসা চলেছে তিনি কয়েক দিন আগে কানাডিয়ান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে এই আজব কেসটির বিষয়ে উল্লেখ করে বলেছেন, মেয়েটির শরীর থেকে কখন রক্ত বেরবে তার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে রোগী যখন খুব স্ট্রেসের মধ্যে থাকেন, তখন দেখা গেছে বেশি মাত্রায় রক্তপাত হচ্ছে। কোনও কোনও সময় তো ঘুমের মধ্যেও এমন ঘটনা ঘটে থাকে। চিকিৎসকদের মতে এইভাবে শরীর থেকে রক্ত বেরনোর কারণে মেয়েটি নিজেকে সমাজ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ফলে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদ এমন মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে যে রক্তপাত বন্ধ হওয়ার তো দূরস্থান, ক্রমে বেরে চলেছে। এমন ঘটনা শোনার পর মনে হয় উন্নয়নশীল দেশের আবস্থাও আর পাঁচটা পিছিয়ে পরা দেশের দেশের থেকে আলাদ কিছু নয়। কারণ শিক্ষিত, অগ্রসর ইতালির বাসিন্দারা যদি এমনভাবে একটা বাচ্চা মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে পাকিস্থান বা আফগানিস্থানে বাসা গেঁরে থাকা তালিবানদের থেকে সেই সব শিক্ষিত মানুষধের পার্থক্য় কোথায়?

ঘামের মতো রক্তপাত হওয়া এক বিরল ঘটনা:
চিকিৎসকেদের একাংশ এই পুরো বিষয়টিকে ভাঁওতা হিসেবে দেখলেও একদল হেমাটোলজিস্ট এই বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন ঘামের মতোই রক্তপাত হওয়াটা মোটেও পাবলিসিটি স্টান্স নয়, বরং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা একই ধরনের রোগের শিকার।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা রিপোর্ট দেখে জানা গেছে সে সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ২৪ জন মানুষ এমন বিরল রোগে ভুগছিলেন, যে সংখ্যাটা যে এখন অনেকটাই বেড়ে গেছে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু অনেকেই এমন রোগীদের বিষয়ে জানেন না। কারণ বেশিরভাগই সামাজিক বঞ্চনা সহ্য করতে হবে, এই ভয় পেয়ে নিজের রোগকে নিজের মধ্যেই কবর দিয়ে কোনও মতে বেঁচে রয়েছেন। এদিকে তাদের জীবন বিন্দু বিন্দু করে কমে যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই।