‘আওয়ামী লীগের নেতারা হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন’
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও সহমর্মিতা জানাতে গেলে ফেনীতে তার গাড়িবহরে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। অথচ শত শত বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে বেশকিছু নেতা-কর্মীকে। তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হামলার মিথ্যা নাটকও সাজানো হয়েছিল।’
‘কিন্তু সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা কখনই সফল হয় না, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন,’ যোগ করেন রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা বলেছেন-সম্প্রতি কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলা হয় তার নেপথ্যে ছিল ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাছাড়া ফেনীতে যে অপকর্ম হচ্ছে সবকিছুই তিনি ও তার সহযোগিরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর মিথ্যা মামলা দিয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে। স্থানীয় প্রশাসনকে তিনি ব্যবহার করেছেন নিজের সন্ত্রাসী অপকর্মের সহযোগী হিসেবে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘নিজাম হাজারী বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়ীবহরে যে হামলা চালিয়েছে সেটি আরো উপর অর্থাৎ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েই যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই। থলের বিড়ালকে বেশীক্ষণ আটকে রাখা যায় না।’
খালেদা জিয়ার গাড়ীবহরে হামলা নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আজহারুল হক আরজুসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
এতে লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা আরজু বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সেদিন বেছে বেছে ডিবিসি, চ্যানেল আই, একাত্তর, বৈশাখী টেলিভিশন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুরো ঘটনার নেপথ্য নায়ক নিজাম হাজারী। অথচ ফেনীর উক্ত এমপির দুর্বৃত্তপনা আগে থেকেই দেশের মানুষের কাছে অজানা নয়। ফেনীকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে এই এমপি।’
ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের নতুন আইনের সমালোচনা
ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের নতুন আইনের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে ব্যাংকিং খাতে যে সীমাহীন লুটপাট চলছে আরও বেশী লুটপাটের সুযোগ করে দিতে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। একই পরিবারের চার সদস্য থাকার সুযোগ তৈরি করে দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন প্রস্তাব পাসের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।’
রিজভী বলেন, ‘পরিচালকরা পদে থাকবেন ৬ বছরের পরিবর্তে ৯ বছর। নতুন এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে। জাতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে মূলত: আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক ব্যবসায়ীকে সুযোগ দিতেই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে।’
বাক-স্বাধীনতা হরণ
সম্প্রতি গণমাধ্যম ও মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণরুপে হরণ করতে সম্প্রচার আইন করতে যাচ্ছে সরকার দাবি করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘অশ্লীল, অসত্য, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রকাশ, জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, দেশের অখণ্ডতার প্রতি হুমকি এই ধরনের বিষয় এনে সরকার এমন কালোআইন করতে যাচ্ছে। ওই আইনে ৫ কোটি টাকা জরিমানা এবং ৩ বছরের সাজার বিধান আছে। ক্ষেত্র বিশেষে উভয় দণ্ডই প্রয়োগ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মূলত: এই আইনের শিরোনামকে যতোই ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হোক না কেন, এটি যে বিরোধী দল, বহুমত, বিশ্বাস, স্বাধীন চিন্তার ওপর কুঠারাঘাত করার জন্যই এই আইন পাশ করার তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার।’
‘যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা, বিরোধীতা ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বেপরোয়াভাবে দমন করার জন্যই এই আইন করা হচ্ছে। এই আইন পাশ হলে একদলীয় দু:শাসনের কালো অন্ধকার আরো ঘনীভুত হবে,’ বলেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন