পদ্মায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আলিশান হাতুড়ি
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামার এখন মাওয়ায়। পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের জন্য আনা হয়েছে এই আলিশান হাতুড়ি।
পদ্মা সেতুর ১৩নং পিলারে বিশাল হ্যামারটির সেটিংয়ের কাজ চলছে। এই পিলারে ইতিমধ্যেই মঞ্চ (গাইডিং ফ্রেম) তৈরি করা হয়েছে।
এই ফ্রেমের সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে ৭০ মিটার দীর্ঘ পাইল। এই পাইলের ওপরই বসবে হ্যামারটি। মূলত একটি ভাসমান বার্জ থেকে এ হ্যামারটি ড্রাইভ করা হবে। বার্জের মধ্যে রয়েছে ছয়টি স্টেশন, যা দেখতে অনেকটা কন্টেইনারের মতো। এসব স্টেশনে রয়েছে হ্যামারটিকে ড্রাইভ করানোর জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। রয়েছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। হ্যামারটি পাইলের ওপর স্থাপনের পর ওপরের স্টেশন থেকে হাইড্রোলিক প্রেসার দিয়ে ড্রাইভ করানো হয়। হাইড্রোলিক প্রেসার পেয়ে হ্যামারটি ওপর দিকে উঠে আবার নিচের দিকে আছড়ে পড়ে পাইলের ওপর। এভাবেই পাইলগুলো পদ্মার তলদেশে প্রবেশ করতে থাকে। এই হ্যামার প্রতি মিনিটে ৩৫ থেকে ৪০ বার পাইলে আঘাত করতে পারে। তাতে একটি পাইল বসাতে ৮ ঘণ্টার মতো লাগে। তবে নানা সমস্যা ও পাইল ঝালাই করে জোড়া দিয়ে একটি পাইল বসাতে লেগে যায় সাত থেকে আট দিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি। একটি হ্যামার দুই লাখবার পাইলের ওপর ব্লো করার পর সার্ভিসিং করতে হয়। আর আট লাখ ব্লোর পর অনেক যন্ত্রাংশ বদল করতে হয়।
৩৫০০ কিলো জুল ক্ষমতার হ্যামারটি তৈরি করেছে জার্মানির কম্পানি মেইনক। বিশ্বে এই কম্পানিটির তৈরি শতাধিক হ্যামার রয়েছে। পদ্মা সেতুর জন্য তৈরি করা এই হ্যামারটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড়। কয়েক বছর আগে নিউ ইয়র্কে ৩৭০০ কিলো জুলের একটি হ্যামার ব্যবহার করা হলেও সেটি এখন অকার্যকর।
এই হ্যামার জার্মান থেকে নেদারল্যান্ডস হয়ে সমুদ্রপথে মংলা আসে। তারপর জাহাজে করে মংলা থেকে মাওয়া। পদ্মা সেতুর জন্য অর্ডার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। এর আগে ৩০০০ কিলো জুল ক্ষমতার আরেকটি হ্যামার আনা হয়েছিল। তবে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে সেটি সচল করা যায়নি। এটি খুব শিগগির পাইল ড্রাইভ শুরু করবে বলে জানান প্রকৌশলীরা। হ্যামার চালানোর জন্য জার্মান থেকে আনা হয়েছে ২৪ জন টেকনিশিয়ান। তাঁরা কাজ শুরু করেছেন হ্যামারটি চালানোর জন্য।
পদ্মা সেতুর জন্য আগে আরো তিনটি হ্যামার আনা হয়েছে। ১৯০০, ২৪০০ ও ৩০০০ কিলো জুল ক্ষমতার। ৩০০০ কিলোজুলের হ্যামারটি যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে বন্ধ থাকলেও অন্য দুটি দিয়ে সেতুর ২ ও ১৪ নম্বর খুঁটিতে পাইল ড্রাইভ চলছে। ১৯০০ কিলো জুল ক্ষমতার হ্যামার দিয়ে ১০০ মিটার গভীরে পাইল বসানো যাচ্ছে। বাকি অংশ ২৪০০ কিলো জুলের হ্যামার দিয়ে ১২৮ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইল বসানো হচ্ছে। তবে কয়েকটি পাইলের গভীরতা আরো বেশি হওয়ায় এ দুটি হ্যামার দিয়ে পাইলিং করা যাচ্ছে না। একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘চারটি পিলারের নিচের মাটি নরম। সেগুলোর ১২৮ মিটার থেকেও বেশি গভীর করতে হবে। এ জন্য বেশি ক্ষমতাধর হ্যামার প্রয়োজন ছিল। তাই এই হ্যামারটি আনা হয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন