রোহিঙ্গা ফেরত প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে জাতিসংঘ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ (আবুল হাসান) মাহমুদ আলী বলেছেন, মিয়ানমারের ইচ্ছেতে ১৯৯২ সালে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে। চুক্তির খুঁটি-নাটি অনেক বিষয়ে কথা হচ্ছে, কেন নাই, কবে হবে এই বিষয়ে কথা বলে লাভ নেই। মূল কথা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর যুক্ত হবে বলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার(২৫ নভেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নেপিদোতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত ২৩ নভেম্বর। মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এবারের আসেম সম্মেলন শেষে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
ওই চুক্তির বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শুধু ফেরত নিবে মিয়ানমার। তাও আবার যাচাই-বাছাই শেষ করে। এর মধ্যে যারা যেতে ইচ্ছুক শুধু তাদেরকেই ফেরত দেয়া হবে। এ নিয়েই বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের ইচ্ছা অনুযায়ী ৯২-এর চুক্তির অনুসরণে এবারের চুক্তিটি হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের(২০১৬) অক্টোবর এবং এ বছরের ২৫ আগস্টের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, মিয়ানমার শুধু তাদেরই ফিরিয়ে নেবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে উগ্রবাদীদের হামলার সূত্র ধরে রাখাইনে দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর থেকেই প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পরিকল্পিত দমন অভিযানের বিবরণ দিচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে ওই হামলার পর। আগে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা মিলিয়ে এখন দশ লাখের বেশি হয়েছে।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে গিয়ে তাদের নিজেদের বাড়িতে নয়, অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে সীমিত সময়ের জন্য থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।
এসময় সাংবাদিকরা জানতে চান, সরকার তো বলেছিল, এবারের পরিস্থিতি ৯২–এর চেয়ে আলাদা। তবে আমরা ৯২–এর চুক্তি কেন অনুসরণ করলাম। এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার ওই চুক্তি অনুসরণ করতে চায় বলে সেভাবেই করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। এর খুঁটিনাটি, ত্রুটি–বিচ্যুতি, এটা-ওটা নেই, কেন নেই, কী হবে—এসব কথা বলে তো কোনো লাভ নেই। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো, রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নিতে চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের সঙ্গে এই চুক্তিতে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে—এমন বিতর্কের ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যে চুক্তিটি হয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। যে স্বার্থ উপেক্ষা করার কথা বলা হয়েছে, এই মন্তব্য অত্যন্ত চমৎকার। আমার মনে হয়, এটি হাস্যকর মন্তব্য। এসময় মন্ত্রী কিছুটা উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে বলেন, স্বার্থ কে ঠিক করে? যে সরকার ক্ষমতায়, সে সরকারই ঠিক করে। আমরা স্বার্থ ঠিক রেখেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মাঠপর্যায়ে আরেকটি চুক্তি সই হবে বলে জানান তিনি। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা রয়েছে। এজন্য দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। তারাই ঠিক করবেন কিভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়ে গেছে। সে জন্য সেখানে তাদের নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করতে চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হয়েছে। রাখাইনে বাড়িঘর নির্মাণের বিষয়ে এই দুই দেশ মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা করবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন