ট্রাম্পের ঘোষণায় বিশ্বে নিন্দার ঝড়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্র দেশগুলো ট্রাম্পের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়েছে। বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ার আগেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যে চরম অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যক্ত করলেও কারো কথা রাখেননি তিনি।

সবার আপত্তি সত্ত্বেও জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেশটির বর্তমান রাজধানী তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের ঘনিষ্ট মিত্র সৌদি আরব ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছে। সৌদি আরব বলেছে, এই ঘোষণা অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য বলেছে, তারা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করবে না।

বিশ্বজুড়ে কড়া সমালোচনা ও বিরোধিতার মধ্যেই ট্রাম্পের ঘোষণা দেওয়ার দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের পররাষ্ট্রনীতি উল্টে দিয়ে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন ট্রাম্প। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জেরুজালেমের অধিকারস্বত্ব সবচেয়ে কাঁটাময় ইস্যুগুলোর অন্যতম। ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে ‘শোচনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনিরা টানা অবরোধ ও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ আহ্বান করেছে। অবশ্য বুধবার থেকেই ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে আটটি দেশ জেরুজালেম ইস্যুতে আলোচনার জন্য শুক্রবার জরুরি সভা ডেকেছে। এ নিয়ে শনিবার বৈঠক করবে আরব লিগ।

ট্রাম্প কী বললেন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুধবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের শান্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ধরনের পদক্ষেপে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা ও হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করা হলেও ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন এবং ডানপন্থি শিবিরে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি ঘোষণা করছি।’

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়া আর ‘বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেয়ে কম বা বেশি কিছু নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি করাই সঠিক।’

ট্রাম্পের দাবি, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা যদি অনুমোদন করে তাহলে দীর্ঘদিনের সংঘাত অবসানে ‘দুই রাষ্ট্রভিত্তিক’ সমাধানকে সমর্থন করবে যুক্তরাষ্ট্র। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মূল কথা হলো- ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের জন্যও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে কী বলছে?
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘তিন হাজার বছর ধরে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে জেরুজালেম।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নথির সূত্র দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষণার পক্ষে ইসরায়েলকে গরম গরম প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চাপ বাড়তে পারে।

মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, জেরুজালেম তাদের ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘শোচনীয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর কোনোভাবেই শান্তির সাফাইকারী রইল না। এ ছাড়া গাজা উপত্যকা শাসনকারী হামাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ট্রাম্পের এই ঘোষণা ‘জাহান্নামের শতদরজা খুলে দিয়েছে’।

বাকি বিশ্ব কী বলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রসহ আরব ও বৃহত্তর মুসলিম বিশ্ব ট্রাম্পের এই ঘোষণার চরম নিন্দা জানিয়েছে। এরই মধ্যে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।

সৌদি আরবের রয়্যাল কোর্ট বলেছেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বড় ধরনের বিপর্যয় এবং জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষ অবস্থানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

‘আমরা সবাই এর বিরোধিতা করছি, তা পরিষ্কার করতে’ বিশ্বের মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘গভীর উৎকণ্ঠার মুহূর্ত’ এটি।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন তিনি। তার মতে, এর মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হলো। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তারা এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কূটনীতিক ফেডেরিকা মোগেরিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন