সারাদিনের আয় চলে যায় সাঁকো পারাপারে

বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার দুই বছর পার হলেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার শাখা নদীর রামডাকুয়া ঘাট এলাকায় আজও নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। উপরন্তু সেতু নির্মাণের বদলে ওই স্থান ইজারা দেয়ায় ইজারাদার একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে সেখান থেকে তুলছেন অতিরিক্ত টাকা।

শুষ্ক মৌসুমে মানুষ বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল না করলেও নেয়া হয় টাকা। এ নিয়ে সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১০ হাজারেরও বেশি খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও গাইবান্ধা জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার অন্তর্গত রামডাকুয়া এলাকায় তিস্তার শাখা নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২২ লাখ টাকা। সেতুর নকশা করেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব:) ডা. আবদুল কাদের খান। নির্মাণের তিন বছর পর ২০১৫ সালের বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে যায়।

এরপর ওই সেতুস্থান রামডাকুয়া ঘাট হিসেবে ইজারা দেয় গাইবান্ধা জেলা পরিষদ। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে নৌকা এবং পানি কমে গেলে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করে মানুষ।

গত বছর ওই ঘাট সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ইজারা দেয় জেলা পরিষদ। সাঁকো পারাপারে জনপ্রতি ৫ টাকা, মোটরসাইকেলসহ ১৫ টাকা, রিকশা-ভ্যানসহ ৩০ টাকা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ৪০ টাকা নেন ইজারাদার।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাইকেল-মোটরসাইকেল, রিকসা-ভ্যানসহ অটোরিকসা ও সাধারণ মানুষ ওই বাঁশের সাঁকোটি পার হচ্ছে। পারাপারের সময় সাঁকোটি দোলে। একপাশের মানুষ পারাপার হওয়ার সময় আরেকপাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়। এই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চারটিরও বেশি ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করে। এছাড়া প্রতিদিন স্কুল-মাদরাসা ও কলেজগামী সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী চলাচল করে এই রামডাকুয়া ঘাটটি দিয়ে।

রামডাকুয়া ঘাট দিয়ে চলাচল করা তিস্তাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, এই পথ ছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে যাওয়ার বিকল্প কোনো সড়ক নেই। তাই বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজন বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে কষ্ট করে কোনোমতে পারাপার হচ্ছে। সেতুটি বিধ্বস্ত হওয়ায় ব্যবসায়িক মালামাল আনা-নেয়ায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

রিকশাচালক সাদ্দাম মিয়া বলেন, রামডাকুয়া ঘাট পার হতে প্রতিদিন ৬০ টাকা দিতে হয়। অথচ প্রতিদিন আয় করি মাত্র ১৫০ টাকা। বন্যায় সেতু ভেঙে যাওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও নতুন সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হলো না। শুকনো মৌসুমে সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল না করলেও দিতে হয় টাকা। এতে করে আমরা বিপাকে পড়েছি।

রামডাকুয়া ঘাটের ইজাদার আকবর আলী মুঠোফোনে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়। আমি এই ঘাটটি যৌথভাবে ইজারা নিয়েছি। আমার পার্টনার অতিরিক্ত টোল নিচ্ছে কিনা খোঁজ নেব। একই বিষয়ে আকবরের সঙ্গে যৌথ ইজারা নেয়া আমিনুল ইসলাম বললেন, অতিরিক্ত টোল নেয়া হয়না। সরকারি মূল্যতালিকা অনুযায়ী টোল নেয়া হচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল মুনসুর মুঠোফোনে বলেন, রামডাকুয়া ঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

গাইবান্ধা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এস মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে ইজাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।