কাজী ফারুকের কারাবাসের খরচ বহন করবে মামলার বিজয়ী
আদালতের আদেশ অমান্য করায় প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী ফারুক আহমদকে একমাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিমের কাছে দেওয়ানি কারাদণ্ডের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এটা মূলত সম্মানহানিকর মূলক দণ্ড। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে কারাগারে তার খরচ সরকার বহন করে থাকে। কিন্তু কাউকে দেওয়ানি কারাদণ্ড দেয়া হলে কারাগারে থাকাকালীন তার সব খরচ মামলায় বিজয়ী পক্ষকে বহন করতে হয়। ফলে হাইকোর্টের দেয়া এক মাসের কারাদণ্ডের মামলার বিজয়ী পক্ষকে ড. কাজী ফারুক আহমদের জেলে থাকাকালীন সব খরচ বহন করতে হবে’।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমএ ওয়াদুদের কাছে চেয়ারম্যানের কার্যালয় বুঝিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের এ আদেশ প্রতিপালন করে ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তবে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন।
আদালতে বাদী পক্ষে (প্রশিকার বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমএ ওয়াদুদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সিরাজুল ইসলাম) আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বারেক চৌধুরী, নুরুল আমীন, নুরুল ইসলাম মাতুব্বর ও মো. সোলায়মান।
অপরদিকে ড. কাজী ফারুক আহমদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম (অ্যাটর্নি জেনারেল), জেড আই খান পান্না, মাহবুব আলী এমপি, এএম আমিনউদ্দিন ও রমজান আলী শিকদার।
জানা যায়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৪ মে সংস্থাটির গভার্নিং বডির এক সভায় কাজী ফারুককে অপসারণ করে এমএ ওয়াদুদকে চেয়ারম্যান করা হয়। এর পরদিনই অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহকারি জজ আদালতে মামলা করেন কাজী ফারুক। একইসঙ্গে এমএ ওয়াদুদের কমিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
আবেদনটি ওই বছরের ৩১ মে খারিজ করে দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আবেদন করেন কাজী ফারুক। জজ আদালতও আবেদনটি খারিজ করে দিলে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই বছরের ১১ আগষ্ট নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন।
এ ছাড়া রায়ে প্রশিকা ভবনে কোনো সমাবেশ বা র্যালি না করতে কাজী ফারুকের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে কাজী ফারুক আপিল বিভাগে আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়। এরপর ২০১২ সালে আবার প্রশিকা ভবনে অবস্থান নেন কাজী ফারুক। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করেন এমএ ওয়াদুদ।
মামলায় কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে প্রশিকা ভবনে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের কার্যালয় দখলের অভিযোগ করা হয়। এ অবস্থায় আদালত কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। রুলে কাজী ফারুককে কেন দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখা হবে না এবং কেন তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর আদালত রায় দেন। রায়ে ৭ দিনের মধ্যে এমএ ওয়াদুদকে কার্যালয় বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে কাজী ফারুককে ৭ দিনের দেওয়ানি কারাদণ্ড ও ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি এ আদেশ কার্যকর করে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান কাজী ফারুক। আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার পুনরায় শুনানি শেষে হাইকোর্ট কাজী ফারুককে একমাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন