‘সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি পাল্টে দিয়েছি’
জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাগো নিউজকে বলেছেন, জাতীয় পার্টি সংসদে ও সংসদের বাইরে কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতি ও দেশের স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। সরকার যখন কোন ক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয় বিরোধী দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে। জাতীয় পার্টি সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি পাল্টে দিয়েছে। জনগণের স্বার্থে জাতীয় সংসদে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দশম সংসদের চার বছর পূর্তিতে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ রোববার জাতীয় সংসদে তার কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাতকারে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।
বিরোধী দলের ভূমিকার প্রশ্নে রওশন এরশাদ বলেন, সংসদে আমরা সত্যিকারে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছি। ৯১ সালের পর থেকে শুরু করে নবম সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি সংসদেই বিরোধী দল বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থেকেছে। কথায় কথায় ওয়াকআউট ও বর্জন করেছে। ফাইল ছোড়াছুড়ি করেছে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করেছে। সরকার কোন ভালো কাজে সহযোগিতা পায়নি। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
ছায়া সরকার হিসেবে বর্তমান বিরোধী দল জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সংসদে কথা বলছে। আমি নিজেও প্রতিটি বক্তব্যে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। আর আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সদস্যরা বিভিন্ন সংশোধনী ও পর্যালোচনামূলক ভূমিকা রাখছেন। কোন কোন ইস্যুতে বিতর্কও করছে, যা ছিল জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির এমপিরা দুইবার ওয়াকআউট করেছে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে একবার ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনী বিল দাবিতে আরেকবার দলীয় সদস্যরা ওয়াকআউট করেছে।
রওশন এরশাদ বলেন, বিরোধী দলের সহযোগিতার কারণে এই সংসদ অতীতের যেকোনো সংসদের চেয়ে সফল। এই সংসদের দুই সদস্য বিশ্বের দু’টি বড় সংসদীয় সংস্থা সিপিএ ও আইপিইউতে নেতৃত্ব দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সংসদে সত্যিকারে বিরোধী দলের ভূমিকায় পালন করছে। আর এজন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি, আর বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। তবে কেবল প্রবৃদ্ধি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ নয়, সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
রওশন এরশাদ বলেন, একই বছরে দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। আমি প্রত্যাশা করব আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন গণতন্ত্রকে সুসংহত, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে রওশন এরশাদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সংসদ উপনেতা নারী হলেও প্রকৃত অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন হয়নি। উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে নারী ও পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি দেশে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আগামীতে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমাদের শক্তি আমাদের তারুণ্য। এ দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি তরুণ। এই তারুণ্যের শক্তি কিনা পারে! কোনো কাজই এদের কাছে অসাধ্য নয়। ৫২,৬৯,৭১ এর বিজয়ে তরুণরাই সামনের কাতারে ছিল। তরুণদের কাছে শুধু অস্ত্র নয়, সাহসও ছিল। সে সাহসের হাত ধরেই তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। দেশের অগ্রগতির জন্য তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সীমিত সম্পদ ও সম্ভাবনাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন