শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ না করলে বরখাস্তের দাবি সংসদে
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে না পারায় আবারও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগের দাবি উঠল সংসদে। মন্ত্রী পদত্যাগ না করলে তাকে বরখাস্ত করে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু এই দাবি জানান।
পরে সংসদ পরিচালনাকারী ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি শুনেছেন, তিনি তার বিবেক-বিচেনায় জাতির স্বার্থে যতটুকু করা প্রয়োজন অবশ্যই তিনি করবেন।’
গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সমালোচনায় পড়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এবার এসএসসি পরীক্ষার আগে শিক্ষামন্ত্রী নানা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিলেও তিনি প্রশ্ন ফাঁস রোধে ব্যর্থ হয়েছেন। পর পর তিনটি পরীক্ষার শুরুর আগেই প্রশ্ন এসেছে সামাজিক মাধ্যমে।
আবার পরীক্ষা শুরুর আগে মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলেই তিনি সে পরীক্ষা বাতিল করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা বাতিল হয়নি।
আবার প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই বলেও প্রমাণ হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে, মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের কথা জানানো হচ্ছে। প্রশ্ন লাগলে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগের কথাও বলছে তারা। গণমাধ্যমকর্মীরা এসব গ্রুপ খুঁজে বের করতে পারলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদেরকে ধরতে পারছে না।
তবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে ৪ ফেব্রুয়ারি ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই দিন প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণাও এসেছে।
পরদিন ফরিদপুরের বোয়ালমারীকে একটি কেন্দ্রে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টার সময় হাতেনাতে আটক হয়েছেন চারজন শিক্ষক।
জাতীয় পার্টির নেতা জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গতকাল (রোববার) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বলা হয়েছিল যে প্রশ্নফাঁস ধরিয়ে দিতে পারলে তাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কৃত করা হবে। অথচ আজ তুষার শুভ্র নামে একটি ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে ইংরেজি প্রশ্ন আছে, সংগ্রহ করতে হলে এতো টাকা লাগবে।’
ঘুষ বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়েও শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন বাবলু। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন আপনারা ঘুষ খান সহনীয় পর্যায়ে। তিনি এও বলেছেন আমিও ঘুষ খাই, অন্য মন্ত্রীরাও ঘুষ খান। এটা বলার পরে উনি মন্ত্রী হিসেবে থাকতে পারেন? আর একজন মন্ত্রী একথা বলতে পারেন? এটা যখন ছাত্ররা শুনবে মন্ত্রী বলছেন সহনীয় পর্যায়ে ঘুষ খেতে, তাহলে প্রশ্নফাঁস ঠেকাবেন কীভাবে? ওনার উচিত ছিল সেদিনই পদত্যাগ করা।’
এর আগে সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার কথা বলার পর গত ৯ জানুয়ারি সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। ঝিনাইদহ-২ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া তানজীব সিদ্দিকী সেদিন শিক্ষামন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।
গত ২৫ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা ভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়্যা খাবেন। অসহনীয় হয়ে বলা যায় আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অবাস্তবিক কথা হবে।’
মন্ত্রী সেদিন আরও বলেন, ‘খালি যে অফিসার চোর, তা না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর। … এই জগতে এ রকমই চলে আসতেছে। সবাইকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।’
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তানজীব সিদ্দিকী বলেন, ‘অতি কথন দোষে দুষ্ট আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অতি বিতর্কিত কিছু বক্তব্য সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন করেছে।’
‘তিনি আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ হলে জনগণের কাছে সরকারকে বিতর্কিত না করে উনার উচিৎ নিজ পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া।’
তানজীব বলেন, ‘নিশ্চয় একটি সফল ও স্বার্থক সরকারের ভাবমূর্তি কোনো দায়িত্বহীন ব্যক্তির লাগামহীন বক্তব্যে ভুলণ্ঠিত হতে পারে না। যারা দায়িত্বে আছেন, বিশেষ করে যারা নির্বাহী দায়িত্বে আছেন তারা বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করবেন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন