সহিংস কর্মসূচিতে না যাওয়ার পরামর্শ খালেদা জিয়ার

সহিংস কর্মসূচিতে না যেতে সিলেটের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ করারও দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সিলেটের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সোমবার রাতে বৈঠকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী এমনই নির্দেশনা দেন। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সিলেট সার্কিট হাউসে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা ১০ মিনিটে থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত দুটি বৈঠক হয়। একটিতে সিলেট মহানগরের ২৫-৩০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। অপরটিতে সিলেট জেলার ২৫-৩০ জন নেতার সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে অংশ নেয়া সব নেতার সঙ্গেই কথা বলেন খালেদা জিয়া। এ সময় সিলেটের সার্বিক অবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে মতামত জানতে চান তিনি। নেতারা খালেদা জিয়াকে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে তাদের প্রস্তুতির কথা জানান।

সবার বক্তব্য শুনে বিএনপি চেয়ারপারসন বৈঠকে অংশ নেয়া নেতাদের বলেন, সহিংস কর্মসূচিতে আপাতত যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে আপনারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতা বলেন, হুট করে কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত যাতে না নেয়া হয় সে বিষয়ে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। ম্যাডাম বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। বিভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে মাঠে থেকে কাজ করবেন।

আরেক নেতাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ম্যাডাম বলেছেন, মামলা-হামলা জেল এগুলোকে আমি ভয় পাইনি। আপনাদের এসব নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। বিগত আন্দোলনে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। ম্যাডাম স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির ২৫-৩০ জন নেতা এবং সিলেট জেলা বিএনপির ২৫-৩০ জন নেতা পৃথকভাবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বলেও জানান বিএনপির এ নেতা।

একদিনের সফরে সোমবার সিলেট গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সকাল সোয়া ৯টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রওয়ানা হয়ে সড়ক পথে বিকেল ৪টায় সিলেটের সার্কিট হাউসে পৌঁছান তিনি। এদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সিলেটের সার্কিট হাউস থেকে সড়ক পথেই ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে রাত সোয়া ৪টায় গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান বিএনপি নেত্রী। খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে দলের প্রায় অর্ধশত নেতা গিয়েছিলেন।

সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ) এবং হযরত শাহপরাণ (রহ) মাজার জিয়ারত করেন খালেদা জিয়া। এর বাইরে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি তিনি।

এর আগে সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেলেও ঢাকা থেকে সিলেট যাত্রায় এ চিত্র ছিল ভিন্ন। তবে সিলেট শহরে প্রবেশের আগে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের নেতৃত্বে ভৈরবে অসংষ্য নেতাকর্মীর শুভেচ্ছা নিবেদন ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া সিলেট যাত্রা পথে অন্য কোনো স্থানে তেমন নেতাকর্মী দেখা যায়নি। আর সিলেট শহরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর প্রবেশের পর নেতাকর্মীদের ঢল দেখা যায়। খালেদা জিয়া যে ৬ ঘণ্টা সিলেট অবস্থান করেছেন ওই সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল গোটা সিলেট নগরী।

সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে খালেদা জিয়া রওয়ানা হওয়ার আগে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেট এসেছিলেন মাজার জিয়ারত করতে কিন্তু সিলেটের লাখো জনতা উপস্থিত হয়ে তাদের মনের ভাষা জানিয়ে দিয়েছেন।