খালেদার কারাবাস দীর্ঘায়িত হলে পাল্টাবে কর্মসূচির ধরন

এক সপ্তাহ ধরে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সোচ্চার বিএনপি নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি আর অনশন কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ দলটি।

খালেদা জিয়া মুক্তির বিষয়টি দীর্ঘায়িত হলে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হতে পারে বলে দলীয় জানা গেছে। তবে এই নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুরনো ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় বিএনপি প্রধানের ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রায়ের পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। নির্জন এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। অনিশ্চয়তায় পড়েছে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি। রায়ের পর দিন শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাদ জুমা সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দলটি। শনিবার সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করা হয়। রোববার কোনো কর্মসূচি দেয়নি।

এরপর দ্বিতীয় দফায় সোমবার মানববন্ধন, মঙ্গলবার অবস্থান এবং সর্বশেষ বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালন করে।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। দেশনেত্রী আমাদের এই নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে। এরপর আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেব।’

তিনি বলেন, ‘নেত্রীর মুক্তি এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যহত থাকবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। এটা আমাদের শেষ কথা।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য আমাদের নেত্রী নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

কর্মসূচি পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সময় মতোই আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব। তবে আমাদের কর্মসূচি হবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে এখনো আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’

বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘(বৃহস্পতিবার) ও (শুক্রবার) কোনো কর্মসূচি নেই। সম্ভবত আগামীকাল পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’

এদিকে বুধবার রাত পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি পায়নি তার আইনজীবীরা। এতে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে আপিল প্রক্রিয়া। কারাবাসের এক সপ্তাহ হলেও আপিল করতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘একটু আগে আদালত থেকে জানিয়েছে জজ সাহেব মাত্র সই করেছেন। এখন বাদবাকি টাইপ করে আগামীকাল (বৃহস্পাতিবার) খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেবে।’

তিনি বলেন, ‘কপি দেয়ার নোটিশ এসেছে, সই আছে- আমরাও দেখলাম।’

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন জানান, ৬৩২ পাতার রায় এতো কম সময়ে সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করা কষ্টকর। দ্রুত সরবরাহ করতে তারা চেষ্টা করছেন।

এর আগে গত সোমবার আদালতে ৩ হাজার ফলিও (যে কাগজে রায়ের নকল দেয়া হয়) জমা দেন তার আইনজীবীরা। রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ায় পর এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।