‘এটা জীবনের দীর্ঘতম ২০ মিনিট ছিল’

‘এটা আমার জন্য একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। আমি ২০ মিনিট ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এটা আমার জীবনের দীর্ঘতম ২০ মিনিট ছিল।’

এভাবেই দুঃসহ স্মৃতির কথা বর্ণনা করছিলেন অভিভাবক ফিগিউরোয়া। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পার্কল্যান্ডের যে বিদ্যালয়ের বন্দুকধারী হামলা চালায়, সেই স্কুলেই পড়েন ফিগিউরোয়ার মেয়ে। গোলাগুলির পর ছুটে আসেন স্কুলের সামনে, মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেন মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার, কিন্তু কোনো কিছুতেই তাকে পাচ্ছিলেন না। আর এদিকে ধৈর্যের বাঁধ যেমন ভেঙে যাচ্ছিল, ঠিক তেমনি শরীরও যেন অবশ হয়ে যাচ্ছিল। এক ভয়াবহ দুশ্চিন্তা এই অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রাস করে নেয় ফিগিউরোয়াকে। প্রায় ২০ মিনিট টানা চেষ্টার পর জানতে পারেন, না মেয়ে বেঁচে আছে। সে স্কুলের বাথরুমে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে লুকিয়ে ছিল।

শুধু ফিগিউরোয়াই নয়। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে এমন অনেক বাবা-মা দাঁড়িয়ে ছিলেন স্কুলের বাইরে। সবার চোখেই আতঙ্কের ছাপ আর মুখে একটাই কথা, ‘আমার বাচ্চাটাকে কেউ দেখেছেন?’

বন্দুক হামলার প্রত্যক্ষদর্শী কোমলমতি শিশুদের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আরো ভয়াবহ। হামলার সময় স্কুলটির ছাত্র লেন মুরে তাঁর বাবা-মাকে মেসেজ পাঠায়। সে লিখে, ‘মা-বাবা, স্কুলে গোলাগুলি হচ্ছে। বাইরে অনেক পুলিশ, গাড়ির শব্দ। আমি অডিটরিয়ামে আছি, এখানকার দরজা বন্ধ।’ কয়েক মিনিট পর সে আরো একটি মেসেজ পাঠায়, ‘আমি ভালো আছি।‘

স্কুলটির শিক্ষার্থী হার্টলি গোলাগুলির সময় বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলে, ‘আমার বোনের বন্ধু আমাকে তাৎক্ষণিক মেসেজ পাঠায়। বলে, রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও, জলদি লুকাও। স্কুলে কেউ বন্দুক নিয়ে ঢুকেছে।’

হার্টলি বলে, ‘আমার বোন আমাকে এবং মাকে মেসেজ পাঠায়। তাতে লেখা ছিল, হায় ঈশ্বর, স্কুলে কেউ বন্দুক হামলা করেছে।‘

‘শুধু আমার বোনই নয়, তাদের সব সহপাঠী প্রায় আড়াই ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। তারা বের হতে পারছিল না। কেননা তারা ধারণা করছিল যে, হামলাকারী ওই ভবনেই রয়েছেন’, যোগ করে হার্টলি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে বন্দুক হামলার ঘটনা নতুন নয়। বরং দিন দিন এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু ২০১৮ সালে দেশটির বিদ্যালয়গুলোতে ১৮টি হামলার ঘটনা জানা যায়।

ভাবনার বিষয় হলো, এ ধরনের ঘটনায় এত কম বয়সে শিশুদের মনে পড়ছে গভীর নেতিবাচক ছাপ। এমনকি মানসিক ব্যাধির শিকার হয়ে পড়ছে অনেক শিশু।

তেমনি এক শিশু যুক্তরাষ্ট্রের আভা। চোখের সামনে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু এত বেশি ছাপ ফেলেছিল তার ছোট্ট মনে যে, সে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়েছিল তাকে।

আভা তার মনের অবস্থা জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পকেও চিঠি লিখে। চিঠিতে আভা লেখে, ‘প্রিয় প্রেসিডেন্ট, যা কিছু হয়েছে আমি দেখেছি এবং শুনেছি।

আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু জেকবের গুলি লেগেছিল। সে মারা যায়। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। আমি তাকে ভালোবাসতাম এবং একদিন হয়তো তাকে বিয়ে করতাম। আমি বন্দুক ঘৃণা করি। এটা আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে, আমার বন্ধুকে কেড়ে নিয়েছে।’